মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হওয়ায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আদালতের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য দাফনের দুই মাস পর কবর থেকে মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাঁই নগরপাড়া গ্রাম থেকে শিশু মো. মাহিদ (৮) এর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইব্রাহিম এবং কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) কাজী মাহফুজ হাসান সিদ্দিকী।
মৃতের পরিবার ও মামলার এজাহারে জানা যায়, মৃত মাহিদের বাবা থাকেন বিদেশে। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মাহিদ সবার বড়। গত ২ জানুয়ারি বিকালে শিশু মাহিদ স্থানীয় শাহ সামছ উদ্দিন সাফিয়া খাতুন মাদ্রাসায় পড়তে যায়। বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। সে ওই মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র ছিল।
পরদিন ৩ জানুয়ারি মাহিদের মা ছেলের জন্য মাদ্রাসায় খাবার পাঠালে মাদ্রাসা থেকে বলা হয় মাহিদ মাদ্রাসায় আসেনি। এর পর শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিবেশী রোশনা খাতুন বাড়িতে এসে জানান- শিশু মাহিদ ফাঁস লাগানো অবস্থায় আত্মহত্যা করে তার রান্নাঘরে ঝুলে আছে। খবর শুনে ছুটে যায় মাহিদের মা ও দাদি। শিশু মাহিদদের ও রোশনা খাতুনের ঘর পাশাপাশি।
মাহিদের মা ইয়াসমিন ও দাদি কল্পনা আক্তার গিয়ে দেখেন, রোসনা খাতুনের রান্না ঘরের আড়ায় শিশু মাহিদের ঝুলন্ত লাশ। গলায় মাথার পাগড়ি ছিল। পা ছিল মাটিতে লাগানো। এমন অবস্থা দেখে চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে পড়েন শিশুর মা ও দাদি।
পরে স্থানীয়রা ওইদিনই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করেন। পরে শিশুর পরিবারের লোকজনের অবস্থা স্বাভাবিক হলে জানতে পারেন, লাশের শরীরে ফাঁসির কোনো চিহ্ন ছিল না। ঘার ছিল ভাঙ্গা। এতে তাদের পরিবারের সন্দেহ হয়। মাহিদকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশু মাহিদের দাদি কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ ৫নং আদালতে প্রতিবেশী রোশনা খাতুনসহ মোট ৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অন্য আসামিরা হলেন, মো. জয় (১৯) মল্লিক মিয়া (৪০), কালাম (৫৮) নজরুল শাহ (৪৫)।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শিশুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৫ জানুয়ারি কটিয়াদী মডেল থানার ওসিকে আদেশ দেন।
মামলার বাদী ও শিশু মাহিদের দাদি কল্পনা আক্তার বলেন, আমার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে জমিজমা নিয়ে প্রতিবেশী রোশনা খাতুনের পরিবারের বিরোধ চলছিল। কয়েকবার সালিশ দরবার হলেও মীমাংসা হয়নি। এই বিরোধের জের ধরেই আমার নাতিকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে থাকতে পরে বলে ধারণা করছি। এর আগেও এই মহিলা দেবরের সন্তানকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় জেল খেটেছেন।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকির মধ্যে আছি। পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। আমরা নিরাপত্তা চাই এবং ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার চাই।
শিশু মাহিদের মা ইয়াসমিন বলেন, আমার সন্তান আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।