প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে করা আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট। এর সঙ্গে তাদের ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ডাদেশের অনুমোদন) শুনানি একসঙ্গে হবে বলেও আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশনা দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ রুমি।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এসে পৌঁছায় গত ৬ জানুয়ারি।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ওরফে শান্ত, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাবেক সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাবেক সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মুস্তবা রাফিদ এবং সদস্য মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মুনতাসির আল জেমি এবং ইহতাশামুল রাব্বী তানিম।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাবেক গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, সাবেক আইন বিষয় উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, সাবেক ছাত্রলীগকর্মী আকাশ হোসেন ও মোয়াজ আবু হুরায়রা।
একইসঙ্গে আদালত প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
এছাড়া ছাত্রলীগকর্মী খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, এএসএম নাজমুস সাদাত, মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ, মুহাম্মদ মোরশেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতুকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। তাদের মধ্যে জিসান, তানিম ও মুস্তবা রাফিদ পলাতক।
পরে রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আসামিরা হাইকোর্টে জেল আপিল করেন।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালত আবরার হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করে। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান এজাহারভুক্ত ১৯ জনের পাশাপাশি আরও ৬ জনসহ মোট ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে ৬০ জন সাক্ষীর নামের তালিকা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ৪৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা জমা দেন। গ্রেফতার ২২ জনের মধ্যে ৮ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ সংশোধনে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনর্গঠন করেন।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেক জনকে আসামি করা হয়।
প্রতিবাদের মুখে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক রাসেলসহ বুয়েট শাখার ১১ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। একই অভিযোগে ১৪ অক্টোবর অমিত ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।