মাঝে মেয়েদের পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য এখনও ‘নিষিদ্ধ বিষয়’। বিশেষ করে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বিষয়টি স্বেচ্ছায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা বিপাকে পড়ছে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়লে মেয়েদের পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা আরও অর্থবহ হবে। এর ফলে অনেক মেয়েই অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে বাঁচবে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর ঢোলভাঙ্গা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিখা। পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতেই বাংলা ট্রিবিউনকে সে জানায়, ‘পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন না থাকলে কাপড় ব্যবহার করতে হয়। কোথাও বেড়াতে গেলেই কেবল স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করি। স্যানিটারি ন্যাপকিন না থাকলে বাবাকে কখনও বলতে পারি না। মা যখন বাসায় থাকে না, তখন সমস্যায় পড়ি। নিজে কখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে যাইনি।’
পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পেরে স্কুল থেকে মেয়েদের ঝরে পড়ার সংখ্যাও বেশি। পলাশবাড়ীর ওই স্কুলে পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে একটি টয়লেট ভবন তৈরি করেছে ওয়াটার এইড বাংলাদেশ।
টয়লেট ভবনটির বিশেষত্ব হলো, একাধিক মেয়ের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত বসার স্থান। রয়েছে প্রয়োজনমাফিক বড় টয়লেট কক্ষ। যেখানে নির্দিষ্ট বাকশে সংরক্ষিত থাকে প্যাড। এ ছাড়াও সে কক্ষে কাপড় শুকানো ও ব্যবহৃত প্যাড ফেলার স্থান রয়েছে। প্রতিটি দেয়ালে আছে একটি করে হাতল। বেশি অসুস্থ বোধ করলে যাতে কেউ পড়ে না যায় সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এ ছাড়াও টয়লেট ভবনে রয়েছে সাবান ও বেসিন।
এভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিরিয়ড উপযোগী টয়লেট গড়ে তোলা হলে শিখার মতো অনেকেই পাঠে পুরো মনোযোগী হতে পারবে বলে মনে করেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষিক মুসলিমা শিল্পী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টয়লেট ভবনটি নির্মাণের আগে পিরিয়ডকালীন অনেক মেয়েই স্কুলে আসতে চাইত না। এখন তারা নিয়মিত আসছে।’
নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জানায়, “আগে পিরিয়ড হলে চুপচাপ ঘরে বসে থাকতাম। এখন তা করি না। স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন থাকায় তা ব্যবহার করতে পারি। আমার মা নেই। বাবা বা ভাইকে কিনে দেওয়ার কথা বলতে পারি না। তারাও এ নিয়ে আমার সঙ্গে কখনও কিছু বলেনি। তাই এ ‘রোগ’ হলে অস্বস্তি থেকে তাদের কিছু জানাই না।”
পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন- এমনটাই মনে করেন রিপ্রোডাকটিভ হেলথ সার্ভিসেস, ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশন প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক ডা. এলভিনা মোস্তারী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে মেয়েরা আজীবন পিরিয়ডের মতো প্রাকৃতিক বিষয়টি রোগ ভেবে চেপে যেতে চাইবে।