করোনা মহামারির একবছর আজ। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ঠিক এক বছরের মাথায় বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয় গেছে সাড়ে পাঁচ লাখ। রোগী শনাক্তের ঠিক ১০ দিন পর প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর জানায় প্রতিষ্ঠান। দেশে এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে মারা গেছেন আট হাজার ৪৬২ জন। করোনা থেকে দেশে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৭ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা থেকে মোট সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ তিন হাজার তিনজন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করে ১১ মার্চ। ততদিনে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, দেশে দেশে দেওয়া হয় লকডাউন। ধনী দেশ হতে শুরু করে দরিদ্রতম দেশটিও করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি।
বাংলাদেশে মে’র মাঝামাঝি সময় থেকে মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। সে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই রোগী শনাক্তের হার চলে যায় ২০ শতাংশের ওপর। জুনে সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে। আগস্ট থেকে নতুন রোগীর সংখ্যা কমতে দেখা গিয়েছিল এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও জনগণের মধ্যে শিথিলতা আসে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি জানায় তারা শীতকালে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন। কমিটি দ্বিতীয় দফার সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এখনই করণীয় ঠিক করতে সরকারকে পরামর্শ দেয়।
দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়ের লক্ষ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে এখনই করণীয় বিষয়ে রোডম্যাপ তৈরি করে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়।
গত ১১ অক্টোবর করোনা আবার বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ‘এখনও করোনাভাইরাসের প্রভাব আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরেকবার হয়তো এই করোনাভাইরাসের প্রভাব বা প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। কারণ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে। আমাদের এখন থেকেই সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। আর এ আশঙ্কা সামনে রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসহ ২২টি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভাগকে আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কিন্তু শীতের সময়ে দ্বিতীয় সংক্রমণ তো দূরে থাক, বাংলাদেশে সংক্রমণের হার কমতে থাকে। তবে এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে গবেষণার কথা জানালেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। এর কারণ অনেকের শরীরে হয়তো অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন অ্যান্টিবডি টেস্ট জরুরি। একইসঙ্গে টিকা নিচ্ছে মানুষ। তাতে সংক্রমণের হার খুব একটা বাড়বে না।
মহামারির শুরুর দিকে একটু দ্বিধা ছিল সবার মধ্যে। এটা কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই ছিল মন্তব্য করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধীরে ধীরে সেই অবস্থা কাটতে শুরু করে।
‘যদিও প্রথম দিকে অনেকেই একে সিরিয়াসলি নিচ্ছিল না। এমনকি প্যানডেমিক হলেও বাংলাদেশে আসবে না-এমন কথাও অনেকে বলেছেন’।
চীনের অভিজ্ঞতা, বিশেষ ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে চিকিৎসা হচ্ছিল, তার আলোকে বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন, ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস প্ল্যান তৈরি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, সব মন্ত্রণালয় মিলেই কাজ করা হয়।
ডা. আলমগীর বলেন, তবে কেবল সরকার নয়, বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রথম দিকে সহযোগিতা এসেছে। সাধারণ মানুষের অনেক অংশগ্রহণ ছিল। মানুষ প্রথম স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশগুলো শুনেছেও। হাসপাতালগুলো কাজ করেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে। এটাও ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।
বহু দেশের তুলনায় আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। সেই অনুযায়ী অনেকেই অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উপজেলা বা সাব সেন্টার পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর অনেক দেশেই এত বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা নেই। ছোট দেশ হয়েও আমরা অনেক কিছু করতে পেরেছি। ইউনিফায়েড হয়েছি। বিশেষ করে গণমাধ্যম এখানে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে, বলেন ডা. আলমগীর।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারিতে উহান থেকে ফেরত আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে যে ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছিল সেটা ভালো ছিল। কিন্তু তারপর ইতালি থেকে অভিবাসীরা আসা শুরু করলো। সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে মনোযোগের ঘাটতি ছিল। হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এর কারণেও দেশে করোনা ছড়িয়েছে। সংক্রমিত রোগীদের ট্রেস করে টেস্ট করাতে বলা হয়েছিল জাতীয় কমিটি থেকে।
‘তবে করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের সোচ্চার ভূমিকার কারণেই সাধারণ মানুষ যেমন সচেতন হয়েছে, তেমনি নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। তাতে করে অনেক ঘাটতি পূরণ হয়েছে।’ যোগ করেন অধ্যাপক নজরুল।
করোনা মোকাবিলায় আর্লি লকডাউনের ভূমিকার কথা জানিয়েছেন ডা. আলমগীর। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ১৭ মার্চ থেকে। এরপর ২৬ মার্চ থেকে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এসময়ে সারা দেশেই জরুরি সেবা, পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা ইত্যাদি অতি-প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো ছাড়া গণপরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।
শুরুর দিকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা ও অন্য রোগীদের করোনা রোগীদের পূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারীর জন্য ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
এ জন্য সরকারি করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতাল ডেডিকেটেড করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, সাজিদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যধি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল। পরে আরও বেসরকারি হাসপাতাল যোগ হয়।
পরে সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালকে একইসঙ্গে করোনা ও অন্য করোনা রোগীকে একসঙ্গে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ জারি করে। যদিও মাঝে করোনা রোগী কমে আসায় ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়।
এদিকে, গত ১৬ ডিসেম্বর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল এবং শয্যা সংখ্যাসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে তিনটি মোবাইল ফোন নম্বর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব নম্বরে কল করা হলে করোনা ডেডিকেটেড কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা ও আইসিইউ রয়েছে এসব জানা যাবে। এতে রোগীদের ঘুরতে হবে না।’
করোনা মোকাবিলায় নো মাস্ক নো সার্ভিস কাজ করেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যদিও মাস্ক না পরতে মানুষের অজুহাতের শেষ ছিল না। গত ২৫ অক্টোবর মাস্ক ছাড়া কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “চারদিকে ব্যাপকহারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সব স্তরেই। আমাদের যতগুলো ইনস্টিটিউশন আছে, লোকাল বা অর্গানাইজেশনাল প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় নির্দেশনা দিয়েছি ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’।”
সব জায়গায় মাস্ক ব্যবহারে কঠোর পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব মসজিদে নামাজের পর অন্তত দুবার মাস্ক পরার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আদেশ প্রচার করতে হবে। আলেম-ওলামাদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও সেটার সঙ্গে একমত। সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া ঢুকতেই দেওয়া হবে না। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও।
বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলায় কেমন করেছে জানতে চাইলে এই ধরনের বিপর্যয় বা মহামারিতে পুরো বিশ্বই দিশেহারা থাকে মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, সে হিসেবে বাংলাদেশেও আন্তরিকতার অভাব ছিল না। কিন্তু বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল।
‘কিন্তু এই এক বছরে অনেক শেখা হয়েছে। তাতেই করোনা প্রতিরোধের একটি যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ-এটা স্বীকার করতেই হবে। মহামারি শিখিয়েছে, মহামারিতেও বাংলাদেশ কাজ করতে পারে।’ যোগ করেন চিন্ময় দাস।
প্রমাণ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের টিকা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিকা নিয়ে যেসব অপপ্রচার হয়েছে সেগুলো কোনও কাজই করেনি।
শুরুর দিকে অন্যান্য দেশের মতোই হতবিহ্বল ছিলাম, এমন মন্তব্য করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে, জাতীয় পরার্মশক কমিটি চেষ্টা করেছে সরকারকে সঠিক পরার্মশ দিতে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে টেস্ট কম ছিল, এখন বেড়েছে। যদিও সক্ষমতা ছিল ৩০ হাজারের মতো, কিন্তু সেটা একদিনেও হয়নি। তারপরও এখন যে টেস্ট হচ্ছে সেটা নিয়মিত হলে আগামী দিনে করোনা না থাকলেও দেশের কাজে লাগবে ‘
ড. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘প্রথম দিকে হাসপাতালের ব্যবস্থপনার কারণে কোথায় করোনা রোগীরা ভর্তি হবে তার কোনও দিক নির্দেশনা ছিল না। কিন্তু যখন বুঝলাম সব হাসপাতালেই কোভিড-নন কোভিড সেবা চালু করা উচিত, এরপর থেকেই রোগীরা সেবা পেতে শুরু করে। আবারও যদি রোগীর চাপ বেড়ে যায়, তখনও সবার ব্যবস্থা করতে পারবো।’
‘আমরা জানতামই না, এসব রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে উচ্চ ভলিউমের (হাই ফ্লো) অক্সিজেন দরকার হয়।’ এমনটা জানিয়ে অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, সেই সময় মাত্র কয়েকটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ছিল। এখন অনেক বেড়েছে। আরও অনেকগুলো পাইপলাইনে আছে। এগুলো সব হয়ে গেলে, এসব হাসপাতালে অক্সিজেন নিয়ে আর অসুবিধায় পড়তে হবে না। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা শ্বাসকষ্টের অন্যতম চিকিৎসা। তা শুরুতে চালু করতে পারলে অনেক রোগীকেই আইসিইউতে যেতে হতো না। সেটাও এখন আমরা জানি। এখন হাসপাতালগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি আছে। সেবাও দিতে পারছি। আগামীতে করোনা ছাড়াও নিউমোনিয়া অথবা শাসকষ্টের রোগীদের হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দেওয়া যাবে।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বারবার বলেছে, টিকা নিয়ে কেবল চুক্তি করলেই হবে না, অর্থ বরাদ্দ, অগ্রিম অর্থ দিতে হবে। সরকার খুব ভালোভাবে কাজগুলো করেছে। টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রথম দিকে নিবন্ধন ও এসএমএস পাওয়া নিয়ে খানিকটা জটিলতা হলেও, এখন সবাই খুশি। বলেন অধ্যাপক শহীদুল্লাহ।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। এদিন প্রাথমিকভাবে ৫৬৭ জনকে টিকা প্রয়োগ করা হয় কুর্মিটোলা হাসপাতালে।
জাতীয়ভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। এর আগে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন নিবন্ধন করেছে এবং ভ্যাকসিন নিয়েছে ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এক বছরের মাথায় ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা যাবে-এটা ২০২০ সালের ৮ মার্চে চিন্তাও করিনি।
অনেকেই মনে করছেন, করোনা থেকে বাঁচতে ভ্যাকসিনই একমাত্র উপায়। সেটা কখনোই নয়। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় গত এক থেকে দেড় মাস রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। এটা ধরে রাখা একটা চ্যালেঞ্জ।
সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ডা. আলমগীর বলেন, সারা বিশ্বে এ ভাইরাসের ধরন বদলাচ্ছে। বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। কোনও কোনও ভেরিয়েন্টে হয়তো স্প্রেডিং ক্যাপাসিটি বেড়ে যাবে। কোনও ভেরিয়েন্টে মৃত্যুহার বাড়বে। আবার অনেক পরিবর্তনে ভাইরাস দুর্বলও হবে। সবকিছু মিলিয়ে সতর্ক থাকা দরকার। রাষ্ট্র করবে রাষ্ট্রের কাজ, কিন্তু সামাজিক ও ব্যক্তিগত সচেতনতা আরও জরুরি।
তিনি বলেন, অন্যদিকে টিকায় যারা অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন তাদের অবশ্যই আগে টিকা নিতে হবে। টিকা নিলে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় শতভাগ কমে যাবে। হাসপাতালে ভর্তির হার কমবে, জটিলতা হবে না। তখন অন্যদের সেবা দেওয়া যাবে বেশি।
করোনাকালে মানুষের সবচেয়ে বেশি ভরসার জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় টেলিমেডিসিন। এখন পর্যন্ত সরকারের স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে কল করেছেন ৮৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৯ জন। জাতীয় ৩৩৩ নম্বরে কল এসেছে এক কোটি ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৮০টি। আইইডিসিআর-এর ১০৬৫৫ নম্বরে কল এসেছে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৬৪২টি। করোনাকালে টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন দুই কোটি ৩৮ লাখ সাত হাজার ৭৫১ জন।