রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন

আলোচিত ছিলেন যেসব কারণে জয়নাল হাজারী

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

জীবনের পুরো সময়টুকুই আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন ফেনীর এক সময়ের ‘গডফাদার’ খ্যাত নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারী।

সোমবার বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেন জয়নাল হাজারী।

আলোচিত জয়নাল আবেদীন হাজারী ছিলেন একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ২ নং সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাজনগরে গিয়ে ওই এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি একটি সিভিল ডিফেন্স টিমও গঠন করেছিলেন।

জেলা পর্যায়ের নেতা হয়েও একসময় জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় ছিলেন জয়নাল হাজারী। কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকলেও গত ১০ বছর রাজনৈতিকভাবে অনেকটা নিঃস্ব ছিলেন তিনি। নিজের হাতেগড়া রাজনৈতিক শিষ্যদের বাধার কারণেই ফেনীর রাজনীতিতে আর প্রবেশ করতে পারেননি আলোচিত এ রাজনীতিক।

ছাত্রাবস্থায় ফেনী কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) জিএস ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্বপালন করেন জয়নাল হাজারী।

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। মূলত ১৯৯৬ সালের পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ফেনীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী মারা যান। এই পেক্ষাপটের পেছনে হাজারীকে সন্দেহ করা হয়।

২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে হাজারীর বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ১৭ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী।

সংসদ সদস্য হিসেবে তার শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী। এ কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। ফেনী থেকে হাজারিকা নামে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সম্পাদকও তিনি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরেন তিনি। পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার।

এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি।

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার দেড় দশক পর দলীয় পদে ফেরেন জয়নাল হাজারী। ২০১৯ সালে ফেনীর এই নেতাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা করা হয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে এই পদে মনোনয়ন দেন। এর আগে হাজারীর চিকিৎসার জন্য একই বছরের সেপ্টেম্বরে ৪০ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী।

হাজারীর বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দল এমন কি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আছে। তার এই নির্যাতন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খবর পরিবেশন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেককে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি ও তার বাহিনীর নির্যাতনের কথা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ।

তবে হাজারীর দাবি ছিল, ‘স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। আমার প্রধান শত্রু জামায়াত-শিবির। তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমাকে বাঁচতে হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। এর বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই। যারা আমাকে বিতর্কিত বলে তারাই বলতে পারবে কেন বলে।’

২০০০ সালের থার্টি ফাস্ট নাইটে ঢাকার টিএসসি চত্তরে বাঁধন নামরে এক নারী লাঞ্চিত হয়েছিল। বিষয়টি তখন সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। কয়েকদিন ধরে পত্রিকার শিরোনাম ছিল বিষয়টি। সংসদেও ব্যাপক হৈচৈ হয়েছিল এটি নিয়ে।

সব দিক থেকেই যারা বাঁধনকে লাঞ্চিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছিল। রাসেল নামের একটি ছেলে ও তার সঙ্গীদের ফাঁসির দাবি পর্যন্ত করা হয়েছিল।

পুরো সরকারই এই ঘটনার জন্য বিপাকে পড়েছিল। সংসদে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছিল। এমনি এক পরিস্থিতিতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে উল্টো ভাষায় জয়নাল হাজারী বলেছিলেন, ‘আমি শুধু রাসেল নয়, বাঁধনেরও বিচার চাই’।

এ ছাড়া দেশের আলোচিত বিভিন্ন ইস্যুতে মন্তব্য করে আলোচনায় আসতে চাইতেন ফেনীর বিতর্কিত এ রাজনীতিক।

আলোচিত পরিমনিকাণ্ড ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ‘সত্যবচন’ নিয়েও কথা বলেছিলেন জয়নাল হাজারী।

জয়নাল হাজারী প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যু নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি, মানুষের অযাচিত কান্না ও শেষকৃত্যে জনতার ঢল এবং মাদার তেরেসার মৃত্যুকে উপেক্ষা করার ঘটনা নিয়েও কথা বলেন।

হাজারী আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন, মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে মারা যাওয়া ডায়নাকে নিয়ে এত কিছু হলো, যদিও তার দু’দিন পরই মাদার তেরেসার মৃত্যু হয়। কিন্তু তেরেসাকে নিয়ে সেই অর্থে মানুষেরা বা গণমাধ্যম তেমন আগ্রহ দেখায়নি। তার শেষকৃত্যে এক হাজার মানুষও উপস্থিত হয়নি এবং গণমাধ্যমেও তেমন খবর আসেনি। এই হলো পৃথিবী।

ব্যক্তিগত জীবনে ‘চিরকুমার’ ছিলেন জয়নাল হাজারী। কলেজ জীবনে প্রেমিকা বিজুকে হারিয়ে তার বিরহে আর বিয়ে করেননি বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

বছরখানেক আগে একটি টিভি অনুষ্ঠানে নিজের রোমান্টিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমি যখন কলেজের ছাত্র ছিলাম তখন বিজুও কলেজের ছাত্রী ছিলো। আমি গান লিখতাম এবং বিজু গান গাইতো। এভাবেই প্রথমে আমাদের পরিচয়ে হয়েছিলো। পরে আমাদের ভালোবাসা হয়। যুদ্ধের সময়ে আমি যখন চলে গেলাম তখন তারা সোনাগাজী এলাকায় আত্মগোপন করেন।

পরে একজন রাজাকার তাকে জোর করে বিয়ে করেছিলো। বিজুর সঙ্গে কথা হয়েছিলো আমরা কেউ কাউকে ছাড়া বিয়ে করবোনা। তবে যুদ্ধের সময়ে আমি সংবাদ পেয়েছিলাম তার বিয়ে হয়ে গেছে। চাইলে জোর করে এনে আবারো বিয়ে করতে পারতাম। তা আমি করি নি। বিজু আমাকে যে ওয়াদা করেছিলো তা ভেঙ্গেছে।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.