সন্ধ্যা, হাতিরঝিলে লোকজন একটু বেশিই থাকে। গোটা ঢাকার লোকজন এসে গিজগিজ করে এদিন। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। ঢাকার রাস্তাঘাট তো প্রতিদিনই মেলার মতো, শুক্রবার সেই রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন লোকজনে গিজগিজ করে।
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে যখন লোকজন কিছুটা কমে কমে যাচ্ছিল, সে সময় গুলশানের লেক ড্রাইভ রোড অর্থাৎ আরেকটি চিনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যদি বলা যায় তাহলে বলতে হবে গুলশান ল;একের পাশ দিয়ে যে নতুন রাস্তাটা হয়েছে তাই দিয়ে হাতিরঝিলে ওঠা যায়, পুলিশ প্লাজার পেছন হয়ে।
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে সেদিক দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলাম। যখন লোকজন কমে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়েও একজ জায়গায় লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। একটা ভ্যান ঘিরে একটু হইহল্লা। বুঝলাম কোনো পণয় কেনাবেচা হচ্ছে, যেটা হামেশাই হয় হাতিরঝিল কেন্দ্রিক। মানে শুক্রবার এলেই মেলা বসে যায়।
এখন তো আবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো ফটোগ্রাফার দিয়ে ভরে গেছে হাতিরঝিলের বিভিন্ন পয়েন্ট। ছবি তুলছে, মানুষজন দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছে। পরে সেগুলো কেবল দিয়ে মোবাইলে চালান করে দিয়ে টাকা নিচ্ছে।
কৌতুহল মানুষের স্বভাবজাত বিষয়, এগিয়ে গেলাম। ভ্যানগাড়িতে যা বিক্রি হচ্ছে তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পোলা কোর্মা, কোপ্তা, কালিয়া, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির রোস্ট- কী নেই? সব বিক্রি হচ্ছে এবং অনেকটা তুলনামূলক সস্তায়। বিষয়টি একটু ধাক্কাই খেলাম, অনেককিছুই বিক্রি হতে দেখেছি, রিকশাভ্যানের ওপর ভাত বিক্রি হতে দেখেছি- মানে ভাতের হোটেল দেখেছি। কিন্তু এমন উন্নত মানের খাবার বিক্রি হতে দেখিনি।
মুহূর্তেই সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। একজনকে দেখলাম সে বাসায় ফোন করেছে-
‘এই তুমি আজ রান্না করো না। আমি পোলাও কিনে নিয়ে আসতেছি।’
অবাক ভাবটা কাটিয়ে ভ্যানের একজন জিজ্ঞেস করলাম, তিনি উত্তর দিতে নারাজ। দুই থেকে তিনজন বা তারও বেশি হতে পারে- মিলে এই খাবারের দোকান। অন্যপ্রান্তে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম নাম। তিনি বলবেন না, বিরক্ত হলেন। বিরক্ত হবারই কথা। বেচা বিক্রির সময় সম্পর্কযুক্ত প্রশ্নের উত্তর তিনি কেন দেবেন?
বেশকিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একজন যা জানালেন- তার অর্থ এমন। উনারা নিয়মিত এইসব খাবার বিক্রি করেন। পোলাও ৫০ টাকা থেকে যত টাকার কিন্তু চায়, পলিথিন রয়েছে সেই মাপে দেওয়া হয়। গরুর মাংস এক ছোট গামলা ৩৫০ টাকা, মুরগির মাংস ছোট গামলা ২৫০ টাকা। খাসির মাংস ৩৫০ টাকা। রোস্ট, কালিয়া, কোপ্তা, টিকা কত টাকার কিনতে চায় লোকজন- তার ওপর নির্ভর করে।
কোত্থেকে আনা হয় এসব? বললেন ভ্যানের সঙ্গে থাকা লোকটি। শুক্রবারে রাজধানীর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে খাবার বেচে যায়। সেসব বেচে যাওয়া খাবার হেঁশেল থেকে চলে আসে এই ভ্যানে।