শৈশব হচ্ছে সেই সময়টা, যখন শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা প্রয়োজন। শিশুর জন্মের পর প্রথম আট বছর তার বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এই সময়টি পরিবর্তনের এবং সে পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের।
তবে শিশুর প্রথম তিন বছর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিশুর মস্তিষ্ক নমনীয় থাকে এবং দ্রুত বিকশিত হয়। শিশুর ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিষ্কের বৃদ্ধির ওপর কড়া প্রভাব ফেলে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে যত্নবান হওয়া মা-বাবার দায়িত্ব। শিশুকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো—
উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া : লুকমান (আ.) তাঁর সন্তানকে বলেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কোরো, তোমার আওয়াজ নিচু কোরো; নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৮-১৯)
মন্দ কাজের ব্যাপারে সচেতন করা : শিশুর কাছে মন্দ কাজ ও চুরিকে অপছন্দনীয় করে তুলতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময় মুমিন থাকে না, মদপানকারী মদপান করার সময় মুমিন থাকে না, চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৭৮)
শিশু ও তার ভাইদের মধ্যে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ করো। (বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)
অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া ও স্বার্থত্যাগের অনুশীলন করানো উচিত। উবাদা ইবনে সমেত (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের ওপর (অন্যদের) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না, যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরি দেখো, যে ব্যাপারে তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে দলিল আছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭০৫৬)
শিশুকে ধৈর্য ও ধীরস্থিরতার প্রশিক্ষণ দেওয়া : মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো। ধৈর্যে প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো, আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, এমন দুটি গুণ আছে, যা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। সেই গুণ দুটি হচ্ছে সহিষ্ণুতা আর ধীরস্থিরতা। (মুসলিম, হাদিস : ২৫)
বদান্যতা শিক্ষা দেওয়া : ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে বদান্যতা শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। কেননা ইসলাম কৃপণতা পছন্দ করে না। বদান্যতাই ইসলামের সৌন্দর্য। প্রিয় নবী (সা.)-এর বদান্যতায় মুগ্ধ হয়েও বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। (মুসলিম, হাদিস : ৫৮১৩)
প্রতিশ্রুতি পূরণ করা : শিশুকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করা। তাহলে সে দায়িত্বনিষ্ঠ হবে। তা ছাড়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মোনাফিকের অভ্যাস। (বুখারি, হাদিস : ৩৩)
মাত্রাতিরিক্ত শাসন না করা : শিশুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত কঠোরতা পরিহার করুন। কেননা এতে সে আতঙ্কগ্রস্ত ও মিথ্যায় আসক্ত হয়ে পড়বে। তাকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করুন। নবীজি (সা.) নিজে শিশুদের আদর করতেন, তাঁর উম্মতকেও বলে গেছেন শিশুদের আদর করতে। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৫১)
এবং কোনো ক্ষেত্রে শিশু যদি সাহসিকতার পরিচয় দেয়, তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা।