শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

ইসলাম যে নির্দেশনা দেয় বহুজাতিক বাণিজ্য পরিচালনায়

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

তাগিদেই প্রাচীনকাল থেকে মানবসমাজে পণ্য আদান-প্রদানের রীতি গড়ে উঠেছে। এই আদান-প্রদান এই সময় স্থানীয় গণ্ডি পেরিয়ে বহুজাতিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত হয়। ইসলাম সব বৈধ পণ্য আদান-প্রদানের বৈধ পদ্ধতিকে অনুমোদন করে; বরং ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নানা প্রসঙ্গ এবং এ বিষয়ক উদ্দীপক বর্ণনা কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়।

যেমন মহান আল্লাহ ‘ঈমান’কে ব্যবসা শব্দে ব্যক্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দেব, যা তোমাদের রক্ষা করবে মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে? তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। ’ (সুরা : সাফ্ফ, আয়াত : ১০-১১)

ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসা : ইসলামী শরিয়ত ব্যবসাকে বৈধ করেছে এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে দূর দেশে সফর করা বৈধ বলেই মত দিয়েছেন মাজহাবের সব ইমাম। কেননা ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবসাকে উৎসাহিত করে বলেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘সবচেয়ে পবিত্র জীবিকা হলো যা মানুষ উপার্জন করে নিজ হাতে এবং সৎ ব্যবসার মাধ্যমে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৩০৪)

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জীবিকা বণ্টন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চার দিনের মধ্যে তাতে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের সমভাবে প্রার্থনাকারীদের জন্য। ’ (সুরা : হা-মিম-সিজদা, আয়াত : ১০)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম মাওয়ার্দি (রহ.) লেখেন, ‘আল্লাহ প্রতিটি ভূখণ্ডে এমন কিছু দান করেছেন, যা অন্যদের দেননি। যেন তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে জীবিকা অর্জন করতে পারে। ’ (আদাবুদ-দ্বিন ওয়াদ-দুনিয়া, পৃষ্ঠা ২১০)

আল-কোরআনে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রসঙ্গ : ইসলামের আগমন ও পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক বাণিজ্য তিনভাবে পরিচালিত হতো। তা হলো—১. স্থলপথে ভিন্ন ভূখণ্ডে বাণিজ্য কাফেলা পরিচালনা করা, ২. নৌপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা, ৩. বিভিন্ন দেশের মানুষের সমাগমের স্থলে পরস্পর পণ্য বিনিময় ও বিক্রি করা। উল্লিখিত তিনটি পদ্ধতিই পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।

১. মানুষের সমাগমের স্থানে পণ্য বিক্রি : সুপ্রাচীনকাল থেকে হজ মানুষের জনসমাগমের স্থান। যেখানে বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় ও ভাষাভাষী মানুষ একত্র হয়। হজের মৌসুমে পণ্য বিক্রির অনুমতি দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোনো পাপ নাই। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৮)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘হজের মৌসুমে ব্যবসা করলে তোমাদের কোনো পাপ হবে না। ’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

২. নৌপথে বাণিজ্য : নৌপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রচলন প্রাচীনকালেই ঘটে। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে নৌবাণিজ্যের অনুপ্রেরণা লাভ করা সম্ভব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর অন্যতম নিদর্শন হলো পর্বতসদৃশ সমুদ্রে চলমান নৌযানগুলো। তিনি ইচ্ছা করলে বায়ুকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন। ফলে নৌযানগুলো নিশ্চল হয়ে পড়বে সমুদ্র পৃষ্ঠে। নিশ্চয়ই তাতে নিদর্শন আছে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। ’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত ৩২-৩৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তার আদেশে তাতে নৌযানগুলো চলাচল করতে পারে ও যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পারো। যেন তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। ’ (সুরা জাসিয়া, আয়াত : ১২)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, উল্লিখিত আয়াতে ‘অনুগ্রহ অনুসন্ধান’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নৌবাণিজ্য ও সামুদ্রিক সম্পদ সংগ্রহ করা। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

৩. স্থলপথে বাণিজ্য : স্থলপথে বাণিজ্য কাফেলা পরিচালনা করা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যেহেতু কুরাইশের আসক্তি আছে, আসক্তি আছে তাদের শীত ও গ্রীষ্মের সফরের। অতএব তারা ইবাদত করুক এই ঘরের মালিকের, যিনি তাদের ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভয় থেকে তাদের নিরাপদ করেছেন। ’ (সুরা কুরাইশ, আয়াত : ১-৪)

তাফসিরবিদরা একমত যে এখানে সফর দ্বারা বাণিজ্যিক সফর উদ্দেশ্য। আর পরবর্তী আয়াতে ক্ষুধা মুক্তির ঘোষণা এই ইংগিত প্রদান করে যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত পথে বাণিজ্য পরিচালনা করবেন আল্লাহ তাকে ক্ষুধা থেকে মুক্তি দেবেন। এ ছাড়া আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াত থেকেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অনুপ্রেরণা লাভ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ (সুরা জুমা, আয়াত : ১০)

ইসলামের নীতিমালা : বহুজাতিক বাণিজ্য পরিচালনায় ইসলাম নিম্নোক্ত নীতিমালাগুলো অনুসরণের নির্দেশ দেয়। তাহলো—

১. বহুজাতিক বাণিজ্যের বৈধতা নির্ভর করে ব্যক্তি ও পণ্যের ওপর। কোনো মুসলিম যেমন হারাম কোনো পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে পারবে না, তেমন দেশের কোনো নাগরিক সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে না। যেমন মাদক।

২. মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরীভাবাপন্ন কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না।

৩. পণ্য প্রবেশের সব পথে রাষ্ট্র কর্তৃক তল্লাশি ও নজরদারি অপরিহার্য।

৪. বহুজাতিক বাণিজ্যে দেশ ও মানুষের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখা। বিশেষত পণ্য আমদানিতে জনসাধারণের প্রয়োজনগুলো প্রাধান্য পাবে।

৫. ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করার শর্তে আমদানি-রপ্তানি ও বাজারজাতকরণে ব্যবসায়ীরা সাধারণ স্বাধীনতা ভোগ করবে।

৬. যেসব বিষয় স্থানীয় পর্যায়ে নিষিদ্ধ, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিষিদ্ধ। যেমন ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বাজারজাত করা।

৭. স্থানীয় লেনদেনের মতো বৈদেশিক বাণিজ্যে সুদ পরিহার করা।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.