শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন

জঘন্যতম পাপ, ইসলামে শ্রমিকদের ঠকানো

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১ মে, ২০২১

বিশ্বব্যাপী শিল্প ও উৎপাদন খাত যে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, তা থেকে উদ্ধার করতে পারে শ্রমজীবী মানুষ ও মালিকপক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। মালিকপক্ষ যদি এই দুর্দিনে মুনাফার দিকে না তাকিয়ে শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়, তবে তার সুফল পাবে তারা।

শ্রমিকরা মালিকের পরিবারভুক্ত : ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিক মালিকের পরিবারভুক্ত। ইসলাম শ্রমিককে ‘ভাই’ স্বীকৃতি দিয়ে তার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের দাসরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে, তবে সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন পরিধান করায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৪৫)

শ্রমিকের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা : শ্রমিকের মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকেরই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মালিকানাধীন (অধীন) ব্যক্তির জন্য খাবার ও কাপড়ের অধিকার আছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৬২)

অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘যে আমাদের কর্মী নিযুক্ত হয়েছে সে যেন (প্রতিষ্ঠানের খরচে) একজন স্ত্রী সংগ্রহ করে, সেবক না থাকলে সে যেন একজন সেবক সংগ্রহ করে এবং বাসস্থান না থাকলে সে যেন একটি বাসস্থান সংগ্রহ করে। যে ব্যক্তি এর অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করবে, সে প্রতারক বা চোর গণ্য হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৯৪৫)

মজুরি নিয়ে টালবাহানা নয় : বেতন ও পারিশ্রমিক কর্মজীবীর অধিকার—ইসলাম দ্রুততম সময়ে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩০)

ঠুনকো অজুহাতে বেতন-ভাতা ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আরো ভয়ংকর অপরাধ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিপক্ষে থাকব।…আর একজন সে, যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পর তা থেকে কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য দেয়নি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২২৭)

দুর্দিনে শ্রমিকের পাশে থাকবে মালিক : ইসলাম সাধারণভাবেই দুর্দিনে অভাবগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আর অসহায় ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যদি হয় তার সেবাদানকারী শ্রমিক—তবে এই দায়িত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) মালিকপক্ষকে শ্রমিকের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন পরিধান করায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৪৫)

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘যৌবনকালে যে ব্যক্তি শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের সেবা করেছে, বৃদ্ধকালে রাষ্ট্র (কর্তৃপক্ষ) তার হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিতে পারে না।’ (ইবনে মাজাহ)

জাতীয় দুর্যোগে শ্রমিক ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব : জাতীয় দুর্যোগের সময় নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সম্পদের সুষম বণ্টন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে ইসলামী রাষ্ট্র। প্রখ্যাত তায়েবি আবু মুসলিম খাওলানি (রহ.) ও মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.)-এর মধ্যকার কথোপকথন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি মুয়াবিয়া (রা.)-কে বলেন, ‘(রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে) আপনার দৃষ্টান্ত হলো সেই ব্যক্তির মতো—যে একজন শ্রমিক নিয়োগ দিল এবং তার পশুপাল তার হাতে অর্পণ করল, যেন সে তা যথাযথভাবে দেখভাল করে এবং তার পশম ও দুধ সংগ্রহ করে। যদি সে উত্তম দেখভাল করে—ফলে পশুপালের ছোট পশু বড় হয় এবং দুর্বলগুলো সবল হয়, তবে সে মজুরির উপযুক্ত হয়; কখনো বেশি পায়। আর যদি সে ঠিকভাবে দেখাশোনা না করে, বরং তা ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করে—ফলে পালের দুর্বল পশু ধ্বংস হয়ে যায়, শক্তিশালীগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং সে পশুর পশম ও দুধও ঠিকমতো সংগ্রহ না করে, তবে মালিক তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়, তাকে মজুরি দেয় না, বরং তাকে শাস্তি প্রদান করে।’ (ইবনে আসাকির (রহ.), তারিখু দামিস্ক : ২৭/২২৩)

শ্রমিক ঠকানোর ভয়াবহ পরিণতি : শ্রমিক ঠকানো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম পাপ, বরং ইসলামের নির্দেশনা হলো, শ্রমিক তার প্রাপ্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না হলেও মালিক তাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে। যেমন—শোআইব (আ.) মুসা (আ.)-কে ডেকে এনে পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ পায়ে তার কাছে এলো এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর বিনিময় প্রদানের জন্য।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৫)

অথচ বর্তমানে অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হয়। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোরজবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পবিত্র হতে পারে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪২৬)

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.