জীবনে মুসলিমদের খুবই ঘৃণা করতেন সিদ্ধার্থ। বিভিন্ন সময় জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে শাদাব নাম ধারণ করে। তিনি এখন নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। তবে ২০১২ সালে ইসলাম গ্রহণের পর থেকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে শাদাবকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তাঁর ইসলামগ্রহণের ঘটনা নিয়ে লিখেছেনকামরুন নাহার ইভা।
ইসলামের সাম্যনীতিতে আকৃষ্ট : শাদাব বলেন, ইসলামের সাম্যনীতি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ভিক্ষুক কিংবা একজন ব্যাংকারসহ সব পেশার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়ায়। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আপনাকে ধনী বা সম্ভ্রান্ত কোনো পরিবারে জন্মগ্রহণ করতে হবে না। ইসলাম পুরো মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে। বর্ণ, গোত্র ও আর্থ-সামাজিক অবস্থানের কথা বাদ দিয়ে সবার প্রতি ইসলাম সমান সম্মানের কথা বলে।
ইসলামে পেলেন নানা প্রশ্নের জবাব : সনাতন ধর্মের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে শৈশব থেকে শাদাব অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ধর্ম পালন করতেন। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার মন্দিরে গিয়ে মিষ্টান্ন বিতরণ করতেন তিনি। ক্ষত্রিয় জাতের জন্য পুরোহিতদের নির্ধারিত সব ধরনের রীতিনীতি ও ঐতিহ্য পালন করতেন তিনি। ১৯ বছর বয়সে এসে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও বিভিন্ন রীতি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয় মনের মধ্যে। মা-বাবাকে প্রশ্ন করেও কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাননি। তারা পূর্বসূরিদের ঐতিহ্য অনুকরণের কথাই বলতেন। একসময় নিজের মধ্যে সংশয় তৈরি হতে থাকে। ফলে তিনি ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম নিয়ে পাঠ শুরু করে এবং ইসলামকেই তার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়। সে ইসলাম নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করে।
পারিবারিক বিবাদ বৃদ্ধি : ইসলামের প্রতি শাদাবের ভালোবাসা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁর বাড়িতে নানা ধরনের সমস্যা বাড়তে থাকে। শাদাব গোপনে নামাজ ও রমজানে রোজা রাখা শুরু করেন। এসব আমল তাঁকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁর আচার-ব্যবহারে আমূল পরিবর্তনের বিষয়টি পরিবারের দৃষ্টিগোচর হয় এবং তাঁর ওপর নজরদারি শুরু করে। বিভিন্ন সময় তাঁর ঘরে অভিযান চালাত।
মুসলিম হওয়ায় পরিবারচ্যুত : একদিন শাদাবের পরিবার তাঁর ব্যাগে তাসবিহ, টুপি ও নামাজের বই পায়। তাঁকে স্থানীয় একটি মসজিদে প্রবেশ করতে দেখেছে বলে পরিবারকে এলাকার মানুষ জানায়। অতঃপর পরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে ২৩ বছর বয়সে শাদাবকে পরিবারচ্যুত করা হয়। শাদাব তখন বেকার, না খেয়ে রাস্তাঘাটে, পার্কের বেঞ্চে বা দোকানের সিঁড়িতে রাত কাটাতেন। কিছুদিন পর স্থানীয় একটি মসজিদে শাদাব প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন।
আল্লাহর অনুগ্রহের দিকে ছুটে চলা : আত্মিক প্রশান্তির জন্য শাদাব কোরআন তিলাওয়াত করতেন। পবিত্র কোরআন পাঠ শুরুর পর তাঁর ইসলাম গ্রহণের যাত্রা আরো সুদৃঢ় হয়। শাদাব বলেন, ‘আমি শুনেছি, আপনি আল্লাহর দিকে হেঁটে চললে, আল্লাহ আপনার দিকে ছুটে আসবেন। আমি শুধু হামাগুঁড়ি দিয়েছি। আর তখনই আল্লাহ আমার জন্য শুধু পথ উন্মোচন করেননি; বরং ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান বোঝার সুযোগও তৈরি করেছেন।’
ইসলামের প্রতি গভীর ভালোবাসা : শাদাবের একজন মুসলিম বন্ধুর ঘরে শাদাব আশ্রয় নেন। শাদাব তাঁদের নিজের পরিবার বলে মনে করেন। কিছুদিন পর শাদাব একটি চাকরি জুটিয়ে নেন। কিন্তু সে চাকরির অভিজ্ঞতাও খুব মধুর ছিল না। অফিসে সিদ্ধার্থ ও বাইরে শাদাব নামে নিজের পরিচয় দেন। অফিসের নিরিবিলি স্থানে নামাজ আদায় করেন। আর বিভিন্ন সময় গভীর মনোযোগ দিয়ে মসজিদের খুতবা শোনেন।
ফলে ইসলামের সঙ্গে শাদাবের সম্পর্ক প্রতিদিন গভীর হতে থাকে। ইসলামী জীবনযাপনে শাদাব এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে হাঁটতে গিয়ে আজান শুনলে অজান্তেই টুপির জন্য পকেটে তাঁর হাত চলে যায়। কিন্তু নিজেকে শাদাব সামলে নিতেন।
মুসলিম বন্ধুদের বিস্ময় : শাদাবের মুসলিম বন্ধুরা ইসলাম গ্রহণের খবর পায়। তারা শাদাবের সিদ্ধান্তকে ‘নিজের হাতে কবর খনন’তুল্য বলে অবিহিত করে।