শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

অর্থনৈতিক কুফল সুদের

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৬ মার্চ, ২০২১

অর্থব্যবস্থা শোষণের হাতিয়ার। বর্তমানে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক অস্থিরতার মূলে আছে সুদের কুপ্রভাব। ইসলামে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া যা আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৮)

সুদের অর্থনৈতিক কুফলগুলো নিম্নরূপ

ধনী-গরিব বৈষম্য : সুদের কারণে সমাজের দরিদ্র শ্রেণি আরো দরিদ্র ও ধনী আরো ধনী হয়। পরিণামে সামাজিক শ্রেণিগত বৈষম্য বেড়েই চলে। দরিদ্র অভাবগ্রস্ত মানুষ সাহায্যের আর কোনো দরজা খোলা না পেয়ে উপায়ান্তর না দেখে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। সুদি অর্থনীতিতে পুঁজিপতি ও ব্যাংকাররা অধিক সুদ পাবে—এ লক্ষ্য সামনে রেখে ঋণ দিয়ে থাকে। সে ঋণ উৎপাদনী ও অনুৎপাদনী দুই ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। আর অনুৎপাদনশীল কাজে ঋণের অর্থ ব্যবহারের ফলে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা লোপ পায়। বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো সুদ পরিশোধ করতে হয়। এতে সুদখোর ধনীরা আরো ধনী হয়।

সুদ বেকারত্ব বৃদ্ধি করে : সুদি অর্থায়ন ও বিনিয়োগ ব্যবস্থার অনিবার্য ফল হিসেবে আশাঙ্কাজনক হারে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় পুঁজির মালিক বা ব্যাংক উৎপাদনের কোনো ঝুঁকি বহন করে না এবং সব ঝুঁকি কার্যত উদ্যোক্তার ঘাড়ে চাপে। ফলে নতুন উদ্যোক্তরা শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে না।  জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি বিরাজমান শিল্পের মধ্যে অনেকগুলো সুদের অত্যাচার সইতে পারে না। এতে বেকারত্ব আরো বেড়ে যায়। সুদি অর্থনীতিতে পুঁজির প্রান্তিক দক্ষতা যেখানে প্রচলিত সুদের হারের সমান হয়, বিনিয়োগ সেখানে থেমে যায়। ফলে দেশে বিনিয়োগ হলে যে পরিমাণ শ্রমিক কাজ পেত তারা বেকার থেকে যায়। তাই সুদ বেকারত্ব সৃষ্টি করে শ্রমিকদের আয়হীন করে রাখে। সুদ মজুরি বৃদ্ধির অন্যতম প্রতিবন্ধক।

সুদ সঞ্চয় বাড়ায় না : কেইনসের মতে, উচ্চতর সুদের হার প্রকৃত সঞ্চয়কে অবশ্যই কমিয়ে দেয়। কারণ মোট সঞ্চয় নিয়ন্ত্রিত হয় মোট বিনিয়োগ দ্বারা, সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ হ্রাস পায়। সুদ বৃদ্ধি পেলে তা অবশ্যই আয় কমিয়ে দেবে। এতে বিনিয়োগ যতটা কমবে, সঞ্চয় ততটা হ্রাস পাবে। সুদের কারণে বিভিন্ন উৎপাদন ও আয়-হ্রাস পায়। অনেকে দেউলিয়া হয় আর বহু লোক কর্মহারা ও বেকার হয়ে পড়ে। ফলে সঞ্চয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

সুদ বিনিয়োগ কমিয়ে দেয় : সুদের হার বেড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করাকে কম লাভজনক মনে করে এবং ঋণ কম নেয়। ফলে বিনিয়োগ কমে যায়। বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ লর্ড কেইনসের মতে, বিনিয়োগ নির্ধারিত হয় সুদের হার ও মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতার পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে। তাঁর মতে, সুদের হার মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতার সমান হলে কাম্য বিনিয়োগ হবে। সুদের হার কমলে বিনিয়োগ বাড়ে। এভাবে সুদের হার কমে শূন্য হলে বিনিয়োগ সর্বাধিক হবে। সুতরাং সুদভিত্তিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কম হয়। বিশেষ করে সুদ ক্ষুদ্র বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে। সুদ উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। সুদের হার উৎপাদনকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে দেয় না।

সুদি অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কম হয়। ব্যাংকার ও পুঁজিপতিরা বেশি পুঁজি দীর্ঘকাল ধরে আটক রাখতে আগ্রহী নয় বলে বড় বড় ব্যয়বহুল শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। আবার বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণ সুদের ভিত্তিতে নেওয়া হলে প্রতিবছর বিরাট অঙ্কের সুদের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ কমে যায়।

সুদি ব্যবস্থা সাধারণত অস্থির ও অনিশ্চিত। অত্যধিক ঝুঁকি থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা সুদি ঋণের ভিত্তিতে ব্যয়বহুল শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রদর্শন করে।

সুদের কারণে বরাদ্দ দক্ষতাপূর্ণ হয় না : সুদ পুঁজির দক্ষতাপূর্ণ বরাদ্দে বাধা সৃষ্টি করে। সুদি ব্যাংকগুলো ঋণ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কারবারের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ও লাভজনীনতার চেয়ে সুদসহ আসল ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার ওপরই বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। সুদি ব্যাংকাররা সুদ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা তথা যথার্থ সিকিউরিটি, মর্টগেজ পেলেই ঋণ বরাদ্দ ও মঞ্জুর করে।

সুদ ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করে : সুদি অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে বলে দ্রব্যমূল্য স্তর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বিশ্বে বারবার মন্দা ও মহামন্দার মূল কারণ হলো সুদ। কেইনস তাই সুদপ্রথা বিলুপ্ত করে শূন্য সুদের হার চালু করার প্রস্তাব করেছেন। কেইনসের এই প্রস্তাব কেউ আমলে নেয়নি। ১৯৯৭-৯৮ সালের এশীয় আর্থিক সংকটে এ অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের মুদ্রা থাই বাথ-এর মূল্য পতনের মাধ্যমে বিপর্যয়ের সূচনা হয় এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ড। হংকং, মালয়েশিয়া, লাওস ও ফিলিপাইনও বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়  ২০০৭-২০১০ সালে আবারও মন্দা সৃষ্টি হয়। এ মন্দা হচ্ছে সুদেরই পরিণতি।

পরিশেষে সুদ মানুষকে প্রকৃত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে ফিরিয়ে রাখে। এতে তার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। এটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রচেষ্টার লক্ষ্য ঘুরিয়ে দেয়।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.