ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন কম। সবাই চেষ্টা করছেন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রভাব পড়ে যৌনপল্লীগুলোতেও। তাদের আয় কমে যায়। কিন্তু অনেক মেয়েই নতুন করে পা বাড়াচ্ছেন সোনাগাছি যৌনপল্লীর পথে।
করোনা পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছিল যৌনকর্মীদের। দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আগের চেয়ে বেশি মেয়ে আসছেন সোনাগাছিতে, জানিয়েছেন সোনাগাছির যৌনকর্মীদের একাংশ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক যৌনকর্মী বলেন, দেশে বড় কোনো বিপর্যয় এলে মেয়েদের সংখ্যা আগেও বেড়েছে সোনাগাছিতে। বহু মেয়ে ফের যৌনপল্লিতে পা রাখছেন। তার কথায়, অনেকে পেটের দায়ে, পরিবারের চাহিদা মেটাতে পল্লীর দিকে পা বাড়াচ্ছেন। যদিও এখানে কাজের ক্ষেত্র ছোট। ব্যবসার হালও অত্যন্ত খারাপ। এছাড়া রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা।
আর এক যৌনকর্মী জানান, অনেকে আগে ছোট দোকানে বা মডেলিংয়ের কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের পর সে সব বন্ধ হলে পেট চালাতে তাঁরা সোনাগাছিতেই ভিড় করছেন।
কাজল বসু নামে এক যৌনকর্মী জানান, লকডাউনের সময় করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল সোনাগাছির ব্যবসা। সেই সময় বেশ কিছু জায়গা থেকে সাহায্য পেলেও আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল যৌনকর্মীদের। পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হলেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছে। আবার বাড়ছে খদ্দেরের আনাগোনা।
অন্য এক যৌনকর্মী বলেনন, তার দুই মেয়েকে পড়াশোনার জন্য হোস্টেলে রেখেছিলেন। কিন্তু উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের স্কুল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয় যৌনকর্মী অ্যাঞ্জেলা জানান, লকডাউনের সময় থেকে ব্যবসায় মন্ধা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাড়ির মালিকপক্ষ সেই যুক্তি শুনতে নারাজ। বরং সুযোগ বুঝে তারা বাড়তি সুবিধা নিতে চাইছে। নিয়মিত নানান কুপ্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ অ্যাঞ্জেলার। তাতে রাজি না হলে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
বাড়ির মালিক, চাঁদার জুলুম ছাড়াও করোনা সংক্রমণের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন যৌনকর্মীরা। বর্ষপূর্তির মুখে ফের একবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সোনাগাছি এখন অনেক পরিণত। হাত-পা ঠিকমতো না ধুইয়ে খদ্দেরকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
যৌনকর্মীদের নিয়ে কর্মরত সংস্থা দুর্বার মহিলা সমিতির থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মাত্র একজন যৌনকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।