মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানিবণ্টন চুক্তিসহ ছয় দফা দাবি আদায়ে ১০ মিনিট স্তব্ধ ছিল তিস্তার ২৩০ কিলোমিটার এলাকা। নদীর দুইপাড়ের প্রায় দুই শতাধিক হাট-বাজারে দাঁড়িয়ে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য স্তব্ধ থেকে প্রতিবাদ জানান হাজার হাজার মানুষ।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১০ পর্যন্ত ১০ মিনিট এই কর্মসূচি পালিত হয়। তিস্তা নদীর দুই তীরের প্রায় দুই শতাধিক হাট-বাজার ও বন্দর ১০ মিনিট স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ এই স্তব্ধ কর্মসূচির আয়োজন করে।
বাংলাদেশে তিস্তা নদীর প্রবেশ মুখ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই জিরো পয়েন্ট থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ঘাট পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১০ মিনিটের স্তব্ধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মানুষের হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা।
তিস্তা বাঁচানোর আকুতি নিয়ে বুকে নানা ধরনের স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড। এতে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সর্বস্থরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। স্তব্ধ হয়ে থাকার ১০ মিনিট পর ছয় দফা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নেতারা।
রংপুরের পীরগাছার তারাবাজারে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, হারাগাছের বাংলা বাজারে সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুজ্জামান খান, গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে শেখ হাসিনা সেতুর উত্তরপ্রান্ত সংলগ্ন বাজারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মাহমুদুল হক, সাদেকুল ইসলাম, আব্দুন নূর দুলাল, কাউনিয়া টেপামধুপুরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, কালিরহাটে শামসুল হক, বখতিয়ার হোসেন শিশির, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ হরিপুরে ছাদেকুল ইসলাম, লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু, নীলফামারীর ডিমলা চাপানি বাজারে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সোহেল রানা, আলমগীর হোসেন ও জলঢাকার সোহাগের বাজারে শহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, সরকার তিস্তা রক্ষায় যে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তিস্তা রক্ষা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা চুক্তি সই না হওয়ায় উত্তরের দুই কোটি মানুষ খরা ও বন্যায় নিষ্পেষিত।
তারা বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষদের বাঁচাতে তিস্তা চুক্তি সই এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা, ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, কৃষক সমবায় ও কৃষিভিত্তক শিল্প কলকারখানা, তিস্তার শাখা প্রশাখা ও উপ-শাখার আগের অবস্থায় সংযোগ স্থাপন এবং দখল ও দূষণমুক্ত করে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কৃষিনির্ভর এই জনপদ মরুভূমিতে পরিণত হবে। হুমকির মুখে পড়বে এখানকার কৃষি, পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবনরেখা।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আমরা চাই তার এ ঐতিহাসিক সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হোক। এ মাহেন্দ্রক্ষণে উদ্বোধন করতে হবে তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার বিষয়ক মহাপরিকল্পনার কাজ। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি অভিন্ন পানি চুক্তি ও অবিলম্বে নদী খনন করতে হবে। অন্যথায় তিস্তাকে রক্ষা করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ নভেম্বর তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ তিস্তার দুই তীরের ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। গত ১৯ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত তিস্তাসহ দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা অভিমুখে রোড মার্চ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।