প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ তার মুক্তির দাবিতে ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এবার তারা নামতে যাচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৪ নভেম্বর রাজধানী ইসলামাবাদে বড় ধরনের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিটিআই।
পিটিআইয়ের এই কর্মসূচি ঠেকাতে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে আগামী দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এর অধীনে রাজধানীতে পাঁচ বা তার বেশি মানুষের জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ইসলামাবাদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উসমান আশরাফের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে পদক্ষেপের অংশ হিসাবে রাজধানীতে ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য জনসভা সহ সকল প্রকার জমায়েত দুই মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো।
এদিকে, পিটিআই ২৪ নভেম্বর বিক্ষোভের জন্য তাদের কৌশল চূড়ান্ত করেছে। দেশের সব অঞ্চল থেকে ইসলামাবাদে ‘ঝড়’ তোলার পরিকল্পনা করেছে।
সূত্রের বরাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পিটিআই নেতৃত্ব যেকোনো মূল্যে ইসলামাবাদে পৌঁছানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলে দলের নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পিটিআই প্রতিটি প্রদেশ থেকে গাড়ির বহরের জন্য আলাদা রুট নির্ধারণ করেছে, যার চূড়ান্ত গন্তব্য ইসলামাবাদ।
দলটি জানিয়েছে, প্রতিবাদ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে। মূল কমিটির সদস্যরা ইসলামাবাদে অবস্থান কর্মসূচির পরামর্শ দিয়েছেন।
পিটিআই নেতারা ‘শান্তিপূর্ণ’ রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বাক ও প্রতিবাদের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের উপর জোর দিয়েছেন।
পিটিআই-এর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি বিবৃতি অনুসারে, ২৪ নভেম্বরের বিক্ষোভ দলের সদস্যদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। পিটিআই নেতা ইমরান খানের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি সিদ্ধান্তের দিন হবে, যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কে আমার দলে থাকবে এবং কারা থাকবে না।”
পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২৪ নভেম্বর দেশব্যাপী আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দিয়ে বলেছেন, চুরি হওয়া ম্যান্ডেট, অন্যায় গ্রেপ্তার এবং ২৬তম সংশোধনী (তার ভাষায় ‘একটি স্বৈরাচারী শাসনকে শক্তিশালী করেছে), এসবের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ আয়োজন করা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার কারাগার থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজ, আমি পুরো জাতিকে ২৪ নভেম্বর রাস্তায় নামার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এটা শুধু পিটিআইয়ের ইস্যু নয়, (বরং) এটা প্রত্যেক পাকিস্তানির বাক স্বাধীনতার ইস্যু।’ তিনি ২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে তার দলের বিক্ষোভে প্রত্যেক পাকিস্তানিকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কারাবন্দি নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্লক এবং ভিপিএনের ব্যবহার সীমিত করার জন্য সরকারের চলমান প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, সরকারের এই পদক্ষেপগুলো বাক স্বাধীনতাকে দমন করার এবং যোগাযোগ সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টার অংশ।
ইমরান খান বলেন, “সরকার এর এক্স (সাবেক টুইটার) বন্ধ করে রেখেছিল। আর এখন এমনকি ভিপিএনের ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। মানুষ তথ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইন্টারনেট বন্ধের কারণে পাকিস্তান বিলিয়ন বিলিয়ন লোকসান করেছে। এটা জনগণের অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত।”
পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ আটকের মাধ্যমে তার সমর্থকদের টার্গেট করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আগে তারা সন্ত্রাসের নামে মানুষকে অপহরণ করত। এখন, তারা জাতীয় নিরাপত্তার ছদ্মবেশে এটা করে, সন্ত্রাসীদের পরিবর্তে রাজনৈতিক কর্মীদের তুলে নেয়।”
“আলোচনার পরিবর্তে আমরা আমাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার দেখতে পাচ্ছি।”
এদিকে, ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি পিটিআই সমর্থকদের আগামী ২৪ নভেম্বরের বিক্ষোভকে ইমরান খানের মুক্তির লড়াইয়ের পরিবর্তে দেশের ভবিষ্যতের লড়াই হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুশরা বিবির একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে তাকে বিক্ষোভের বিষয়ে দলীয় কর্মীদের নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।
অডিও বার্তায় বুশরা বিবি পিটিআই নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ভিডিও রেকর্ডিং করার জন্য। তিনি বলেন, “ভিডিওতে আপনারা পিটিআই সদস্য ও সাধারণ জনগণ উভয়কেই দেখান। সাধারণ মানুষকে অবশ্যই জড়িত করতে হবে; এটি কেবল দলীয় কর্মীদের জন্য নয়।”
তিনি আরও পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিবাদের সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে যোগাযোগ বজায় রাখতে ও পিটিআিইয়ের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত।
বুশরা বিবি সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে নেতাকর্মীদের বলেন, ‘আপনারা ইউটিউবার ও সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফ্লুয়েনশারদেরকে জনসাধারণকে অবগত রাখতে বিক্ষোভের লাইভ ফুটেজ ক্যাপচার করতে এবং শেয়ার করতে বলেন। আমাদের বার্তাগুলো ব্যাপকভাবে ও দ্রুত শেয়ার হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি কর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কেউ আহত হলে তাকে তাদের নিজ নিজ এমএনএ বা এমপিদের মাধ্যমে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। কোনো কর্মী আহত হলে তাদের পরিবারকেও সহায়তা করতে হবে বলে নেতাকর্মীদের বলেন বুশরা বিবি।
বুশরা বিবি আরও বলেন, ভিডিও প্রমাণ না পাওয়া গেলে কোনো অজুহাত গ্রহণ করা হবে না। তিনি এই বিক্ষোভকে শুধু ইমরান খানের মুক্তির জন্য নয়, জাতির ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটিকে দেশের সম্মান ও অখণ্ডতার লড়াই বলে অভিহিত করেছেন।
অডিও রেকর্ডিয়ের সবশেষে বুশরা বিবিকে বলতে শোনা যায়, ‘একজন সত্যিকারের মুসলমান হলো সেই ব্যক্তি যে তার নেতা এবং তার দেশের প্রতি অনুগত থাকে।”
পিটিআই নেতা ইমরান খান তার দল ও সমর্থকদের জন্য ২৪ নভেম্বরের কর্মসূচিতে একটি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি দেশের আইনজীবী সম্প্রদায়, সিভিল সোসাইটি এবং প্রবাসী সমর্থকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে প্রধান বিরোধী দল পিটিআইয়ের কর্মসূচি মোকাবেলায় ব্যাপক নিরাপত্তা পদক্ষেপ নিয়েছে।