সীমান্তসংলগ্ন রাজ্যগুলোর আকাশে বড় পরিসরে মহড়ার পরিকল্পনা করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ)। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে টানা পাঁচ দিন চলবে এ মহড়া। সীমান্তের কোনো কোনো অংশ নিয়ে অব্যাহত অস্বস্তির মধ্যে এ ঘোষণা দিল নয়াদিল্লি।
ভারতীয় বিমানবাহিনী জানায়, অরুণাচল, আসামসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর আকাশে মহড়া চালাবে ভারত। মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থিত বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড মহড়াটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবে।
চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান ও উত্তেজনার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সীমান্ত নিয়ে গত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও হয়েছে। অরুণাচল নিয়ে চীনের বড় ধরনের ভূখণ্ডগত দাবি রয়েছে, যা ভারত মানে না।
গত বৃহস্পতিবার চীনা গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং রাজধানী বেইজিংয়ে সেনাবাহিনীর (পিএলএ) সদর দপ্তর থেকে ভিডিও মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্তের অদূরে নিযুক্ত সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য আপনারা প্রস্তুত?’ এর জবাবে সেনারা একসঙ্গে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা প্রস্তুত।’
সীমান্তে মোতায়েন সেনাদের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের কথা বলার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের বড় ধরনের এ বিমান মহড়ার ঘোষণা দেওয়া হলো। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পাশাপাশি হেলিকপ্টার, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান এতে অংশ নেবে।
সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচল সীমান্তের তাওয়াংয়ে চীনের সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়। এরপর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকার আকাশে দুই দিনের মহড়া চালায় ভারত। তবে এবারের মহড়াটি হবে তার তুলনায় বেশ বড় পরিসরে।
একটি সূত্র বলছে, আসন্ন মহড়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড নতুন পাওয়া রাফায়েল ও সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানসহ সব শক্তির সমাবেশ ঘটাবে। মহড়ায় সুপার হারকিউলিস উড়োজাহাজ, চিনুক ও অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে।
ভারতের সাম্প্রতিক এ তত্পরতা সম্পর্কে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, পূর্ব লাদাখে এলএসি বরাবর টানা তৃতীয় শীতে ৫০ হাজারের মতো সেনা সমাবেশে করেছে চীন। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডেপসাং সমভূমি ও ডেমচক এলাকার সীমান্ত থেকে সেনাদের পিছু হটার আলোচনা এখনো সফল হয়নি। একই সঙ্গে সিকিম ও অরুণাচল অংশে এলএসির এক হাজার ৩৪৬ কিলোমিটার সীমান্তরেখা বরাবর সেনাসংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্র বাড়াচ্ছে পিএলএ।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের মতো দীর্ঘ এলএসি বরাবর বেইজিং আকাশ সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। চীনের হোতান, কাশগারম, গুরগুনসা ও শিগাতসে এলাকার বিমানবন্দরে রানওয়ে বাড়ানো এবং দৃঢ় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি বাড়তি বিমান, ড্রোনসহ অন্যান্য ব্যবস্থার জন্য জ্বালানি ঘাটতি পূরণের আয়োজন করা হয়েছে। গত দুই বছরে চীন এসব কাজ এগিয়ে নিয়েছে।
ভারতের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সিকিম, ভুটান ও তিব্বতের সংযোগস্থল লাগোয়া ভুটানের ডোকলাম উপত্যকা। ২০১৭ সালে চীন ও ভারতের সেনারা এখানে ৭৩ দিন ধরে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাকারী পথ ‘শিলিগুড়ি করিডরের’ খুব কাছে অবস্থিত এই উপত্যকা। ভারত মনে করে, ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত এই সংকীর্ণ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করিডরের সুরক্ষার সঙ্গে ডোকলামের নিরাপত্তা সম্পর্কযুক্ত।