মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ ডুবে যাওয়া এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামের কার্গো জাহাজটি দুই দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজটি আগের অবস্থানেই রয়েছে। তবে জাহাজটি উদ্ধারে অপর দুইটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
এদিকে গত দুই দিনে জাহাজটিকে উদ্ধার করতে না পারায় জাহাজে থাকা বিপুল পরিমাণ ডিজেল ও অকটেন মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে।
ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে নদীর মৎস্য সম্পদসহ জীব ও বৈচিত্র। তবে তেলবাহী জাহাজটিকে ধাক্কা দেওয়া জাহাজটি এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
জাহাজ ডুবির ঘটনায় সোমবার পদ্মা অয়েল কম্পানির পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত টিমের আহ্বায়ক পদ্মা অয়েল কম্পানির উপ মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিকসহ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গত শনিবার নয় লাখ লিটার ডিজেল ও দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন লোড করে এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামের কার্গো জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। রবিবার ভোর ৪টার দিকে ভোলার তুলাতুলি সংলগ্ন মাঝের চরের কাছে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশায় একটি কার্গো জাহাজের সাথে সংর্ঘষে তেলবাহী জাহাজটির তলা ফেটে ডুবে যায়।
এ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় জাহাজে থাকা ১২ জেলেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু রবিবার সকালে জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। ডুবে যাওয়া জাহাজটি থেকে তেল মেঘনা নদীর ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভোলা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মাহবুব আলম জানান, নদীর পানিতে দীর্ঘক্ষন জ্বালানি তেলের আস্তরণ থাকলে জলজ প্রাণীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পানির ওপর তেলের আস্তরণ থাকলে পানির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এতে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের খাদ্য সংকট হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, কার্গো জাহাজটি ডুবে গিয়ে পুরো মেঘনা নদীতে বিপুল পরিমানে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারসহ ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণ করা না হলে নদীর পানির স্বাভাবিক যে ইকোসিস্টেম আছে সেটি নষ্ট হয়ে যাবে। এর ফলে মাছের উৎপাদন ব্যহতসহ মাছের সংকট দেখা দিবে।
এমভি সাগর নন্দিনী-২ এর মাস্টার মো. মাসুদুর রহমান বেলাল বলেন, ‘জাহাজটি উদ্ধার একই মালিকের একটি জাহাজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে এসেছে। বাকি আরেকটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। দুই জাহাজ একত্রে মিলে ও ডুবুরিদের সহায়তা জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। ‘
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট হাসান মেহেদী আরিফ জানান, পরিবেশে বির্পযয় রোধে গতকাল (রবিবার) থেকে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে নদীতে থেকে তেল উত্তোলন করা শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ লিটার তেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে কোস্ট গার্ড।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মো. আবদুস সালাম, ‘জাহাজটি দুর্ঘটনার পর থেকে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।