এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই প্রতিবেদন সামনে আসার পর ক্ষেপে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে। আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ১৫ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তপেক্ষপের অভিযোগ তোলা হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জো বাইডেনের সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বা অসমর্থিত অভিযোগ ছড়িয়েছিল মস্কো। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তি ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে এবং প্রচারমাধ্যমগুলোতে বাইডেনবিরোধী প্রচারণার জন্য কাজ করেছিলেন। এছাড়া রাশিয়া তখন ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব কিছু পুতিন জানতেন এবং তিনি নিজেই হয়তো এই বিষয়টি পরিচালনা করেছেন। এর আগেও ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও রাশিয়া হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকাল বুধবার এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বাইডেন বলেন, নিশ্চিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে মূল্য দিতে হবে বলে তিনি পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জর্জ স্টিফেনোপোলাসের কাছে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাকে মূল্য দিতে হবে। তিনি জানান, পুতিনের সঙ্গে তার দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে। সে সময় তিনি বলেছেন, ‘আপনি (পুতিন) আমাকে চেনেন এবং আমিও আপনাকে চিনি। এমন কিছু ঘটেছে সেটা যদি নিশ্চিত হই তবে এর জন্য প্রস্তুত থাকবেন।’
এর আগে ২০১৮ সালের মার্চে রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ে সালিমবুরিকে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া রুশ সরকারের বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকেও সম্প্রতি বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ঘটনা পুতিনের নির্দেশে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও বার বারই তা অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
বাইডেন কি বিশ্বাস করেন যে পুতিন একজন খুনি? এসব প্রসঙ্গ তুলে জানতে চাওয়া হলে বাইডেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি তিনি একজন খুনি।’নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ঘটনায় পুতিনের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি বাইডেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, আগামী সপ্তাহে মস্কোর বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা আনতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খুনি বলার প্রতিবাদে আমেরিকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছে মস্কো। মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করার জন্য রাষ্ট্রদূত আনাতোলি অ্যান্টোনোভকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ককে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গেছে ওয়াশিংটন। এ অবস্থা থেকে সম্পর্কের উত্তরণ ঘটানোর উপায় নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঠেকাতে রাশিয়া আগ্রহী রয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত মঙ্গলবার আমেরিকার পক্ষ থেকে একটি গোপন রিপোর্ট প্রকাশ করার পর এই টানাপোড়েন আরো বেড়েছে। গোপন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।