বাংলাদেশের সীমান্ত নাফ নদের ওপারে প্রতি পিস ইয়াবার মূল্য ৩৮ টাকা। শুধু নাফ নদের বুক পেরিয়ে সীমান্তের এপারে আসা মাত্রই প্রতিটি ইয়াবার মূল্য দাঁড়ায় ৬০ টাকায়। অর্থাৎ নদ পাড়ি দিতেই একেকটার দাম বাড়ে ২২ টাকা।
এভাবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ইয়াবার আড়তে এসে প্রতি পিস ইয়াবার মূল্য হয় ৮০-১০০ টাকা।
আর চট্টগ্রাম পৌঁছে প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ২০০ টাকারও বেশি। রাজধানী ঢাকায় পাইকারি কারবারিদের কাছে প্রতি পিসের দাম ৩০০ টাকার বেশি হয়ে যায়। আবার তা সেবনকারীদের কাছে ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
ইয়াবার দাম বৃদ্ধির ধাপগুলোর এমনই বর্ণনা দিলেন রোহিঙ্গা ইয়াবা সিন্ডিকেটের একজন সরদার। মোহাম্মদ রফিক (৩৮) নামের ওই ইয়াবা কারবারি এবং সিন্ডিকেটের প্রধান আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে উখিয়া থানা পুলিশের এক মাদকবিরোধী অভিযানে ধরা পড়েন। রফিক ১০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান নিয়ে মিয়ানমার থেকে নাফ নদ পেরিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশ করেন।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এক নম্বর শিবিরের ১/ডাব্লিউ লম্বাশিয়া শিবিরের বাসিন্দা এই রোহিঙ্গা রফিক। রফিকের এফসিএমএন নম্বর ২৯৪৯৪৯। রোহিঙ্গা গুরা মিয়া ও আমিনা খাতুন দম্পতির পুত্র রফিক মিয়ানমার সীমান্তের একটি বড় মাপের ইয়াবা সিন্ডিকেটের সরদার হিসেবে কাজ করছেন। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালান ওই শিবিরে।
আজ ভোররাতে রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারি রফিকের ঘরে আসার খবর পেয়েই তাকে পাকড়াও করা হয়। তার কাছ থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবাভর্তি পোঁটলাটি জব্দের সঙ্গে সঙ্গেই অকপটে সীমান্তের ইয়াবা কারবারের বিবরণ দিতে শুরু করেন। রফিক রোহিঙ্গা শিবির ও সীমান্তের একটি বড় সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারবার পরিচালনা করেন। মিয়ানমারের ওপারেও রফিক সিন্ডিকেটের সদস্যরা রয়েছেন।
ইয়াবা কারবারি রোহিঙ্গা রফিক জানান, নাফ নদের ওপারে ইয়াবা তৈরির কারখানাভিত্তিক কারবারিরা এপারে চালান পাঠাতে সিন্ডিকেট সদস্যদের দারুণভাবে উৎসাহিত করে থাকেন। চালান যত বেশি হবে, প্রতিটির মূল্যও তত কম হয়। ৫-১০ লাখ পিসের চালান হলে মূল্য অনেক কম ধরা হয়। এ কারণেই এপারের কারবারিরা বড় চালানের ইয়াবা আনার জন্য ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। বড় চালান হলে পুঁজির অঙ্কের তুলনায় লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, এত দিন পুলিশ শুধু শিবিরের বাইরে অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ অনেক কারবারিকে আটক করলেও এই প্রথমবারের মতো শিবিরের অভ্যন্তরে গিয়ে অভিযান চালিয়ে রফিককে আটক করা হলো। এর আগে উখিয়া থানার ওসি মরিচ্যা বাজার এলাকা থেকে আবু সৈয়দ নামক আরেক বড় মাপের ইয়াবা কারবারিকে আটক করেছিলেন।