লবণাক্ততা, নদীভাঙন, বন্যার মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি র্নিভর এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত কাজের খোঁজে রাজধানীতে পাড়ি জমাচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে এ সংখ্যা প্রতিবছর ৬ লাখ ১২ হাজার। অর্থাৎ দিনে ১ হাজার ৭’শ জন, যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নগরে অভিবাসন আটকানো যাবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে রাজধানীকে বিস্তৃত করে বাসস্থান তৈরি করতে হবে। বিশদ নগর পরিকল্পনা- ড্যাপ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
ঢাকা মহানগরে এখন ২ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে দেশে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। আর তাদের বেশিরভাগই চলে আসছেন রাজধানীতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ২০১৬ সালে হিসাব অনুযায়ী, ২ কোটি বাসিন্দা নিয়ে ঢাকা বিশ্বের ১১ নম্বর মেগাসিটি। এর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়তন ১০৯ দশমিক ২৫১ বর্গকিলোমিটার। বাস করেন প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বাস। ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে ৪৩ হাজার মানুষ বাস করেন। এই জনঘনত্ব অতিমাত্রায় অস্বাভাবিক।
ঢাবি জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুর উন নবী বলেন, সাড়ে চার শতাংশ মানুষ সারাদেশে চলাচল করে। কিন্তু শুধু ঢাকা শহরের অভ্যন্তরেই এর পরিমান ছয় শতাংশ। এতে বাসস্থানের ওপর যে চাপটা পড়ছে, এটা অসহনীয়। এর ফলে বাসস্থানের ভাড়া খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যার্নাস বিআইপি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ৬৩ শতাংশ এলাকায় প্রতি একরে ৩০০ জনের বেশি মানুষ বাস করে। পুরান ঢাকার লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া এবং খিলগাঁওয়ের সবুজবাগে জনঘনত্ব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় একর প্রতি ৭শ থেকে ৮শ মানুষ বসবাস করে। যদিও মেগাসিটির ক্ষেত্রে জনঘনত্বের মানদণ্ড ধরা হয় একরপ্রতি ১২০ জন।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এবং যেখানে মানুষ কম খরচে থাকার জায়গা পায় সেখানেই মানুষ বসবাস করছে। প্রত্যেকটা এলাকার বসবাসের একটা মানদন্ড আছে। ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় মানুষের ঘনত্ব অনেক বেশি, সেসব এলাকার বহন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনা নিতে সময় ক্ষেপনের কারণে রাজধানীর সম্প্রসারিত এলাকাও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে। ঢাকার ধারণ ক্ষমতা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এখনই সুপরিকল্পনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা হলে ঢাকা আরো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।