শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৩ অপরাহ্ন

নারীর সুরক্ষাভাবনা ইসলামে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

সব সৃষ্টিকেই মহান আল্লাহ যুগল করে বানিয়েছেন। সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মহান আল্লাহ প্রথমে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তাঁর জুটি হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে এই যুগল থেকেই পৃথিবীর সব মানুষের বিস্তার ঘটেছে। কাঠামোগত কিছু পার্থক্য থাকলেও নারী-পুরুষ সবাই মানুষ। সে হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ এবং ইবাদতে নেকির মাত্রায় সবাই সমান। জাগতিক উন্নয়নেও সবার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ইসলামে নারীর প্রতি বিশেষ কিছু নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন নেকি অর্জনের মাধ্যমে পরকালীন সফলতার পাশাপাশি পৃথিবীতেও তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত শান্তিময় সমাজ গড়ে উঠে।

যথাসম্ভব গৃহে অবস্থান : গৃহকে নিরাপদ করে গড়ে তোলে যথাসম্ভব নিজ গৃহে অবস্থান করার চেষ্টা করতে হবে। অতি প্রয়োজন ছাড়া গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে হবে। নারীদের জন্য পৃথক কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবহন এবং নারীবান্ধব বাজারব্যবস্থা হলে সেটিও হবে গৃহের মতোই নিরাপদ। কোরআনে নারীদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের আদেশ করা হয়েছে এবং গৃহকে নারীর দিকেই সম্বন্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহেলি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৩)

আবৃত হয়ে বের হওয়া : মানুষের নানা রকম প্রয়োজন থাকে। চাইলেই সারাক্ষণ ঘরে থাকা যায় না। প্রয়োজনে বের হতেই হয়। সে ক্ষেত্রে ডিলেঢালা ও শালীন পোশাক পরিধান করে আবৃত হয়ে বের হতে হবে। এটিই ঈমানের পরিচায়ক ও সুরক্ষার অন্যতম সহায়ক। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)

অন্যত্র বলেন, ‘তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)

মাহরাম ছাড়া সফর নয় : সফরকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলাম সফরে নারীর সঙ্গে মাহরাম (যাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ) থাকা অপরিহার্য করে দিয়েছে। যেন সফরে মাহরাম পুরুষ নারীকে দুশ্চরিত্র লোকদের থেকে নিরাপদ রাখতে পারে এবং নারীর প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করতে পারে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘নারীরা মাহরাম ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই—এ অবস্থায় কোনো পুরুষ কোনো নারীর কাছে যেতে পারবে না।’ এ সময় এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি অমুক অমুক সেনাদলের সঙ্গে জিহাদ করার জন্য যেতে চাই। আর আমার স্ত্রী হজ করতে যেতে চায়। নবী (সা.) বলেন, ‘তুমি তার (স্ত্রীর) সঙ্গেই যাও।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৪৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৩৬)

পর-পুরুষের সঙ্গে অবস্থান নয় :  মাহরাম নয়—এমন কোনো নারী-পুরুষ নির্জন স্থানে একান্তে অবস্থান নিষিদ্ধ। অল্প সময়ের জন্য হলেও এমন অবস্থান থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের সুরক্ষার জন্যই এসব পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। এসব থেকেই ব্যভিচারের পথ তৈরি হয়। নবী (সা.) বলেন, ‘যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে গোপনে অবস্থান করে তখনই শয়তান তাদের সঙ্গী হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭১)

পর-পুরুষের কাছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করা : নারীর সৌন্দর্যের প্রতি পুরুষ আকর্ষিত হয়। সেই সূত্রে কোনো পাপী পুরুষের পাশবিকতার স্বীকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে নারীর সুরক্ষা বিঘ্ন হতে পারে। নিজ সৌন্দর্য পর-পুরুষের কাছে প্রকাশ না করলে অঙ্কুরেই এসব সম্ভাবনা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)

পর-পুরুষের সঙ্গে আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় কথা না বলা : বর্তমানে এমন অনেক সংবাদ শোনা যায় যে মোবাইল ফোনে কথার মাধ্যমে ভাব শুরু হয়ে দেখা-সাক্ষাৎ করতে গিয়ে পাশবিকতার স্বীকার হয়েছে। আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় পর-পুরুষের সঙ্গে কথা বললে অনেক সময় ব্যাধিসম্পন্নরা হীন কর্মের প্রতি প্রলুব্ধ হতে পারে। কাজেই তা এড়িয়ে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পর-পুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)

দৃষ্টি সংযত রাখা : মহান আল্লাহ নারী-পুরুষ সবাইকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। দৃষ্টি থেকেই শুরু হয় হৃদয়ের গুপ্ত প্রণয়। নারী-পুরুষ সবাই দৃষ্টি সংযত রাখলে অনেক অশ্লীলতা ও সামাজিক অপরাধ কমে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বলো, তারা যেন তাদের  দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০-৩১)

পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহর এসব নির্দেশনা সবাই মেনে চললে চারিত্রিক অধঃপতন থেকে যুবসমাজ রক্ষা পাওয়ার মাধ্যমে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। গড়ে উঠবে শান্তিময় সমাজ, ইনশাআল্লাহ।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.