দিল্লি হাইকোর্টের এক বিচারপতি উদ্যোগী হয়েছিলেন, না হলে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) এমন নির্দেশিকা জারি করত কি না সন্দেহ।
আজ শনিবার জারি হওয়া সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে ঢোকার সময় থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত কোভিড-সংক্রান্ত যাবতীয় আচরণবিধি কঠোরভাবে পালিত না হলে যাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে বের করে দেওয়া হবে। এমনকি বিমানে ওঠার পরও যদি দেখা যায় নাক–মুখ ঢাকা মাস্ক চিবুকে ঝুলছে, অথবা নাকের নিচে শুধু মুখ ঢাকা, বলা সত্ত্বেও মানা না হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ কিছুদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে ডিজিসিএর এই নির্দেশিকা জারি, এমন মনে করার কোনো কারণ অবশ্য নেই। তাদের এই নির্দেশিকা দিতে বাধ্য করেছেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সি হরিশঙ্কর। তিনি উদ্যোগী না হলে কড়াকড়ির এই নতুন হুকুম দেওয়া হতো কি না, সন্দেহ।
ঘটনাটা এ রকম। ৫ মার্চ বিচারপতি সি হরিশঙ্কর কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে দিল্লি আসছিলেন। যাত্রাকালে তিনি দেখেন, টার্মিনাল থেকে উড়োজাহাজে পৌঁছানোর বাসে এবং ফ্লাইটের অভ্যন্তরে বহু যাত্রীর মাস্ক হয় নাকের নিচে, নয়তো চিবুকে লটকাচ্ছেন। ঠিকভাবে মাস্ক পরার কথা বললেও কোনো কোনো যাত্রীকে চরম অবাধ্য হতেও তিনি লক্ষ করেন। তাঁর চোখে ধরা পড়ে ফ্লাইটের কর্মীদের অসহায়তাও। এ বিষয়ে ডিজিসিএর ওয়েবসাইটে কোনো নির্দেশিকাও তিনি খুঁজে পাননি। এ কারণে দিল্লি ফিরে তিনি ডিজিসিএকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে করোনা বিধি কঠোরভাবে মানা না হলে যাত্রীদের পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে। কিছু মানুষের অসাবধানতা ও অনড় মনোভাবের ফল ভোগ করতে হয় অনেক যাত্রীকে। তিনি বলেন, ডিজিসিএকে এ বিষয়ে কড়া মনোভাব নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অবাধ্য যাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে বের করে বা ফ্লাইট থেকে নামিয়ে দিতে হবে। অবাধ্যদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
বিচারপতির ওই নির্দেশের পরেই আজ ডিজিসিএর নতুন নির্দেশিকা। সেই অনুযায়ী, ফ্লাইটের অভ্যন্তরে প্রকৃত কোভিড বিধি না মানা যাত্রীকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হবে। বন্দরের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা কর্মী বা অন্যরা কাউকে বিধি ভাঙতে দেখলে প্রথমে সতর্ক করবেন। তারপরেও অবাধ্য হলে যাত্রীকে বের করে দেওয়ার অধিকার থাকবে। কর্তব্যে গাফিলতির জন্য দায়ী থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উড়াল চলাকালে অবাধ্য যাত্রীর বিরুদ্ধে অসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। তাতে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে ‘বিপজ্জনক ও অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে তাঁর ভবিষ্যৎ বিমানযাত্রা বন্ধ করে দেওয়াও যেতে পারে।
ভারতে আজও করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার। সবচেয়ে খারাপ হাল মহারাষ্ট্রের। এই রাজ্য ছাড়াও সংক্রমণ বাড়ছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে।
মহারাষ্ট্রের কিছু শহরে নতুন করে চালু হয়েছে লকডাউন।