২০২০ সালে গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুর্ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে এই মহাসড়কে ২১১টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে নিহত ৩৩১ জন, আহত ৪৮৮ জন। অন্যদিকে, এই একই মহাসড়কে ২০১৮ সালে ১২৪টি, ২০১৯ সালে ঘটে ১০১টি দুর্ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি আরও অনেক কিছু নিয়েই কাজ করছে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্য বলছে, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে (সিটি গ্রেট) গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ১১০টি। সেখানে নিহত ১০১ ও আহত ১১৫ জন। মামলা হয়েছে ৪৮টি। একইভাবে ঢাকা-চট্রগ্রাম (কাচপুর ও ভবেরচর) মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে ১৫২টি-আহত ১৫৬, নিহত ৯২।
পুলিশের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তথ্যের বিশ্লেষণ বলছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে চালকই দায়ী। ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ।
এ ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ বলেন- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বেড়ে যাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা বেড়ে যাওয়া, অদক্ষ চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা।
বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর প্রবণতা, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি- এসব কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির সুপারিশ-দক্ষ চালক তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে। পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের ওপর ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি এবং মহাসড়কে রোড ডিভাইডার বানাতে হবে। রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়কের ওপর চাপ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পথের উপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমবে।
অন্যদিকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র দেওয়া তথ্য বলছে, গতবছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত চার হাজার ৯৬৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৮ জন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০৬টি। নিহত ৫১৭ জন এবং আহত ৬৫৯ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭, শিশু ৬৮।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে সাইদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩৮টি (৩৪%) জাতীয় মহাসড়কে, ১২২টি (৩০.০৪%) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৫টি (২৩.৩৯%) গ্রামীণ সড়কে, ৪৪টি (১০.৮৩%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭টি (১.৭২%) সংঘটিত হয়েছে।
এআরআইর পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই।