শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

প্রস্তুত ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি নরেন্দ্র মোদিকে বরণ করতে

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতে আসার খবরে গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ উচ্ছাস। তাঁরা ধর্মীয় রীতিতে মোদিকে বরণ করতে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে মতুয়া ভক্তরা ঠাকুরবাড়ি ও মন্দিরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধোয়া মোছার কাজ শুরু করেছে। প্রতিদিন যাচ্ছেন সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরের দিন ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র পেয়েছি। পত্রে জানানো হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে ও কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়ি সফর করবেন। তবে এখন পর্যন্ত সফরের কোন কর্মসূচী পাওয়া যায়নি। কর্মসূচী পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর জানিয়েছেন, সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রায় প্রতিদিনই ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে আসছেন এবং নানান ধরনের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধি দল ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেছেন। তাদের মারফত জানা গেছে নরেন্দ্র মোদি হেলিকপ্টার যোগে ঠাকুরবাড়ি দক্ষিণ পাশে মাঠে নামবেন। পরে ঠাকুর বাড়িতে অবস্থিত হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে তিনি পূঁজা করে মন্দিরের সামনেই ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং বাড়ির সামনেই আরেকটি মাঠে ৩ শতাধিক নির্ধারিত মঁতুয়া নেতাদের সাথে মত বিনিময় করার কথা রয়েছে। তবে সরকারি ভাবে কোন নির্দেশনা বা পত্র পাইনি। তিনি আরো বলেন, নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য আগমণ উপলক্ষে ঠাকুরবাড়ির পক্ষ থেকে সাধ্যমতো প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ধর্মীয় রীতিতে তাঁকে যথাযথ সম্মানের সাথে বরণ করা হবে।

ঠাকুরবাড়ির অপর সদস্য অমিতাভ ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঠাকুর বাড়িতে আসছেন এটি আমাদের জন্য অবশ্যই খুবই খুশির এবং গবের্ব। আমরা তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। তিনি আমাদের ঠাকুর বাড়িতে এসে আমাদেরকে ধন্য করবেন এমনটি আশা আমাদের।

হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভক্ত ও ওড়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ কির্ত্তনীয়া বলেন, নরেন্দ্র মোদি ঠাকুরবাড়ি আসবেন এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। এই প্রথম বিদেশী কোন রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের গ্রামে আসছেন এটা অনেক আনন্দের ও গর্বের। আমরা তাঁকে স্বাগত জানাই। তাঁর আগমনে আমরা ধন্য হবো। ধন্য হবে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মঁতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ।

ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে কথা হয় পাশ্ববর্তি মুকসুদপুর উপজেলার ইন্দুহাটি গ্রামের মতুয়াভক্ত সুশীল মন্ডল, মহাদেব বিশ্বাস, নিলরতন বিশ্বাস, অনিমেষ মন্ডল, সবিতা চিন্তাপাত্র ও ওড়াকান্দি গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের সঙ্গে। তারা বলেন, নরেন্দ্র মোদি ঠাকুর বাড়ি আসবেন এই খবর আমরা জেনেছি। ওনার সম্মানের জন্য ঠাকুরবাড়ির ময়লা- আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবো এই জন্য এসেছি। ওনার আগমনে আমরা খুব আনন্দ পাচ্ছি।

বাংলাদেশ মতুঁয়া মহাসংঘের মহাসংঘাতিপতি (সভাপতি) সীমা দেবী ঠাকুর বলেন, বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের এই ঠাকুরবাড়িতে আসছেন এটা শুধু ঠাকুরবাড়ির গর্বের বিষয় নয়, সমস্ত মতুঁয়া ভক্তদের কাছে গর্বের। তিনি আসলে আমরা হিন্দু ধর্মীও মতে উলুধ্বনী, শঙ্খ ধ্বনী, ফুল ছিটানো এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানাবো। ইতোমধ্যে তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, হরিচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান কাশিয়ানী উপজেলার এই ওড়াকান্দি গ্রামে। তাদের অনুসারী ভক্তদের বলা হয় মঁতুয়া ভক্ত। বিশ্বের কোটি কোটি মঁতুয়া ভক্তদের কাছে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি একটি পবিত্র পুণ্যভূমি। নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের ত্রাণ কর্তা হিসাবে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ আবির্ভূত হয়েছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। পরবর্তীতে তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর। তাই প্রতিবছর হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম তিথি মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে এখানে অনুষ্ঠিত হয় স্নানোৎসব ও মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান ভারত, নেপাল এবং শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের মঁতুয়া ভক্তরা এ স্নানোৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। তাদের হাতে থাকে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান পতাকা। সাথে ঢাক -ঢোল ও কাঁশোর বাজিয়ে উলু ধ্বনি দিয়ে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মতুঁয়া অনুসারীরা ছুটে আসেন তীর্থভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে। ভক্তরা প্রথমে ঠাকুর বাড়িতে কামনা ও শান্তি সাগরে (বড় পুকুর) স্নানের মধ্য দিয়ে নিজেদের তথা বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের সকল জীবের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন।এবছর হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১০ তম আবির্ভাব দিবস।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.