নগরীর বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের কালুরঘাটমুখী র্যাম্পে ‘কাঠামোগত’ কোনো সমস্যা না থাকায় ১২ দিন পর যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়।
এদিকে র্যাম্পটি দিয়ে ক্যাভার্ডভ্যান ও বড় আকৃতির ট্রাক চলাচল করতে পারবে না। সর্বোচ্চ ৮ ফিট উচ্চতার গাড়ি এই র্যাম্পে চলাচল করতে পারবে। এজন্য র্যাম্পের ওপর বসানো হয়েছে হাইট ব্যারিয়ার বা অধিক উচ্চতা সম্পন্ন গাড়ি চলাচল প্রতিরোধক। বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক।
ফ্লাইওভারের র্যাম্পের পিলারে ফাটলের খবর ছড়িয়ে পড়লে গত ২৫ অক্টোবর রাত থেকে ওই র্যাম্প দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। একই সঙ্গে ফ্লাইওভারের র্যাম্পের পিলারে ‘ফাটল’ পরীক্ষায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ( চসিক)। চিঠি পাওয়ার পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শুক্রবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
সিটি কর্পোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লাইওভারের পিলার দু’টিতে আপাতদৃষ্টিতে কোনো ফাটল বা স্ট্রাকচারাল ক্র্যাক বা কাঠামোগত ফাটল পাওয়া যায়নি। পিলার দুটির ওই অংশটুকুতে বিদ্যমান ফোম সরিয়ে যথাযথভাবে পরিষ্কার করে সে অংশটুকু ‘হাই স্ট্রেন্থ থিন কংক্রিট’ ব্যবহার করে ফিনিশিং দিতে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ফ্লাইওভারের ওই অংশে লাইট ট্রাফিক (হালকা যানবাহন) চলাচল করা যাবে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব না হলেও সময়ে সময়ে ফ্লাইওভারের গুরুত্বপূর্ণ অংশে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি তথা বিশেষজ্ঞ টিমে ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এর প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
সওজ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা র্যাম্পটি পরিদর্শন করেছি। যে স্থানে ফাটল দেখা দেয়ার অভিযোগ বা গুজব উঠেছিল সে স্থানটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো ধরনের ফাটল পিলারে নেই। যে স্থানটিকে ফাটল বলা হয়েছে সেটি আসলে কন্সট্রাকশন জয়েন্ট। পিলারের ভেতরেও কোনো ধরনের ক্র্যাক বা অন্য ত্রুটি নেই। এটি পুরোপুরি যান চলাচলের উপযোগী আছে। তদন্ত রিপোর্টে আমরা এসব উল্লেখ করেছি।
বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করে মীর আখতার-পারিসা নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটি নির্মাণ করার সময়ই গার্ডার ধসে ১৩ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ফ্লাইওভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও অধিক সুফল ভোগ করার জন্যই পরে চান্দগাঁওমুখী র্যাম্পটি নির্মাণ করা হয়।
এটি নির্মাণ করে দেশের খ্যাতনামা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। ডিজাইন ও নকশা করে ডিপিএম নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান। র্যাম্পের পিলারে ফাটল সৃষ্টির গুজব ওঠার পর পুরো বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারটিই ম্যাক্স নির্মাণ করেছে এমন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ করেন ম্যাক্সের দায়িত্বশীল কর্মকতারা।