।। মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ।।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে আমাদের জীবন। এ কথা আমরা জেনে ও বুঝে গেছি। কিন্তু কতটা? ঈৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষত মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মানব সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে বাবার থেকে মায়ের অবদানকে বড় করে দেখা হয়। অধিকাংশ আদিবাসী জাতি-গোষ্ঠীই মাতৃতান্ত্রিক। তাদের কাছে মানব সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে পুরুষ একটি নিয়ামক মাত্র।
জন্মদান প্রক্রিয়ায় ক্লোনিং পদ্ধতি আবিস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যা সমগ্র সৃষ্টি প্রক্রিয়াকেই ভিন্নমাত্রায় আলোচনার সুযোগ দিয়েছে। যদিও, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কর্তারা আইন-কানুন করে, এ প্রক্রিয়ায় মানব জন্মদানের পথ রুদ্ধ করে রেখেছেন।
এরপর যোগ হয়েছে নানা পন্থা। নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক বা মিলন ছাড়াই সন্তান জন্মদানের অনেক পথ এখন মানুষের হাতে। বিশ্বকর্তারা পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণী মানুষদেও জিন করে রাখছেন জিন ব্যাংকে। গভাশয় ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে আরও অনেক আগে থেকেই। টেস্ট টিউব বেবির ধারণাও এখন প্রায় পুরোনো।
সব কিছু ছাপিয়ে মানববিশ্বে এবার যোগ হলো ‘ই-বেবি’। বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর.কম জানাচ্ছে সে খবর। খবরটির শিরোনাম: ‘ইউটিউব দেখে ‘ই-বেবি’ জন্ম দিল জননী’।
আর খবরে বলা হচ্ছে: ‘ইউটিউব দেখে ‘ই-বেবি’ জন্ম দিল জননী স্টেফানি টেলর ও তার কন্যা ইডেন।
কোনো রকম সম্পর্ক ছাড়াই সন্তান পেতে চেয়েছিলেন ৩৩ বছরের স্টেফানি টেলর। স্টেফনি শুক্রাণু কিনেছেন ইন্টারনেট থেকে।
ইউটিউব দেখে সেই শুক্রাণু গর্ভে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি শিখেছেন। শেষে ই-বে থেকে কিনেছেন প্রজনন প্রক্রিয়ার দরকারি জিনিসপত্র। এর দশ মাস পরে জন্ম দিয়েছেন ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের। কন্যার নাম রেখেছেন ইডেন।
স্টেফনি জানিয়েছেন, গর্ভধারণ কেন্দ্রে সন্তান ধারণ করানোর মূল্য এতটাই বেশি যে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হন।
পাঁচ বছরের এক পুত্রসন্তানের জননী স্টেফনি দ্বিতীয় সন্তানের চেষ্টা করছিলেন। বিষয়টি এক বন্ধুকে জানালে অনলাইনে শুক্রাণু কেনার একটি অ্যাপের সন্ধান দেন সেই বন্ধু। ওই অ্যাপে শুক্রাণু দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির পরিবার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই পাওয়া যায়। স্টেফনি জানিয়েছেন, সেখান থেকেই নিজের সন্তানের জন্য শুক্রাণু দাতা খুঁজে নেন তিনি।
স্টেফনি চেয়েছিলেন তাঁর সন্তান যেন তাঁরই মতো দেখতে হয়। তাঁর সঙ্গে শারীরিক গঠন মেলে এমন কাউকেই খুঁজছিলেন তিনি। আর স্বভাবের দিক থেকেও চাইছিলেন পরিবারমুখী মানুষ। পছন্দমতো শুক্রাণু দাতা পেয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যেই শুক্রাণু পেয়ে যান স্টেফনি। আর প্রথম চেষ্টাতেই সফল হন।
স্টেফনি জানিয়েছেন, প্রথমে এ ব্যাপারে তাঁর বাড়ির কয়েক জন সদস্য রাজি না হলেও ইডেনের জন্মের পর তাঁরা খুশি। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সন্তানের জন্ম দিতে পেরে স্টেফনিও গর্ববোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।
সদ্য মা হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এক তরুণী দাবি করেছেন, ইউটিউবের ভিডিও দেখে তিনি নিজেই নিজের সন্তান প্রসব করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ওই সময় হোটেল কক্ষে তাঁর সঙ্গে আর কেউ ছিল না। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো মা ও শিশু—দুজনই সুস্থ রয়েছেন।
ন্যাশভিলের বাসিন্দা টিয়া ফ্রিম্যান নামের ওই মা জানান, মধ্য জানুয়ারিতে তিনি গর্ভধারণ করেন। ফলে তাঁর ধারণা ছিল, এত তাড়াতাড়ি সন্তান প্রসব হবে না। এ অবস্থায় তিনি এক সফরে জার্মানি যান। কিন্তু ১৪ ঘণ্টার ওই সফরে সব কিছুু পাল্টে যায়।
পেটে ব্যথা হওয়ার পর প্রথমে টিয়া ভাবেন, খাবারের কারণে এমনটা হয়েছে। কিন্তু ট্রানজিট হিসেবে তুরস্কে নামার পর থেকে তাঁর বমিও হতে শুরু করে। তখন তিনি গুগলে সার্চ করে লক্ষণগুলো দেখে বুঝতে পারেন, তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে। তখন তুরস্কের একটি হোটেলে ওঠার পর তিনি বুঝতে পারছিলেন না, ঠিক কি করা উচিত। ‘আমি অন্য একটি দেশে আছি, যেখানে কেউ ইংরেজি বলে না, এখানকার জরুরি নম্বরও জানি না। আমি জানি না কী করা উচিত।’
এরপর টিয়া চিকিৎসককে না ডেকে বরং ইউটিউবের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হোটেল কক্ষের বাথটাবটি গরম পানি দিয়ে ভর্তি করে নেন, কয়েকটি টাওয়াল কাছে নেন এবং ইন্টারনেট দেখে প্রসবের উপযোগীভাবে বাথটাবের একটা অংশে বসেন।
এরপর তিনি পেটে চাপ দিতে শুরু করেন। টিয়া বলেন, ‘আমি জীবনে আর কখনো কোনো কিছুুতে এত ব্যথা অনুভব করিনি। কিন্তু আমার সন্তানের জন্ম খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যায়।’
এরপর শিশুর ‘আম্বিলিক্যাল কর্ড’ তিনি নিজেই কেটে ফেলেন। জুতার ফিতা দিয়ে সেটি আটকে দেন। অবশ্য এর আগে ফিতাটি তিনি গরম পানিতে ধুয়ে নেন। ছেলেটির নাম রাখা হয়েছে জাভিয়ের। সূত্র : বিবিসি।
[ লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বাংলা পোস্ট বিডি নিউজ, প্রাবন্ধিক ও সদস্য ডিইউজে ]