কভিড-১৯ টিকাকরণের সংখ্যা একশ কোটি ডোজের ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে। টিকা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩০ শতাংশকে উভয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত ৪০ সপ্তাহেরও কম সময়ে এক বিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজের এই মাইলফলক অর্জন করেছে। এই মাইলফলক নতুন টিকা আবিষ্কার, টিকা উৎপাদন, বিতরণ এবং প্রযুক্তির মতো টিকাকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতার প্রমাণ দেয় বলে মনে করে ভারতীয় দূতাবাস।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ভারতের কভিড-১৯ টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনা টিকাকরণের জন্য ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স ফর ফোকাসড রিসার্চ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের টিকা অভিযানের একটি বৈশিষ্ট্য হলো- উচ্চ পর্যায়ের নজরদারি এবং সমন্বয়, বিশেষ করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দ্বারা।
ভারতই একমাত্র দেশ যা একাধিক প্ল্যাটফর্ম জুড়ে একাধিক টিকা তৈরি করেছে (ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, জাইকভ-ডি একটি ডিএনএ টিকা, কোভিশিল্ড একটি ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন, জেনোভা ভারতের প্রথম এমআরএনএ টিকা হওয়ার পথে রয়েছে)।
জাতীয় কভিড টিকাকরণ কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা এবং সামনের সারির কর্মীদের পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিকদের তাদের উচ্চ ঝুঁকি কারণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে যারা ৪৫ বছরের বেশি বয়সী ও একাধিক অসুস্থতায় আক্রান্ত এবং পরে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কর্মসূচিটি চালু করা হয়েছিল। চলমান পর্যায়ে ১৮ বছরের বেশি বয়সের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সরকারি টিকাকেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
টিকাকরণ কর্মসূচির ব্যাপ্তি কতটুকু তা এ থেকে অনুমান করা যায় যে, সারা ভারতে ৩,১৩,০০০ কভিড টিকাকেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ৭৪ শতাংশই গ্রামীণ এলাকায় এবং যেখানে এখন পর্যন্ত মোট টিকাপাবার যোগ্যদের মধ্যে ৬৫ শতাংশকে টিকাকরণ করা হয়েছে। ২,৬৪,০০০ জনেরও বেশি টিকাদানকারীসহ মোট ৭,৪০,০০০ জনের টিকা দলকে এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, একশ কোটি ল্যান্ডমার্ক ভারতের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের অদম্য চেতনাকেই প্রতিফলন করে যাদের মধ্যে রয়েছে নার্স, সহায়ক নার্স মিডওয়াইফ এবং হাজার হাজার টিকাদানকারী, যারা বিভিন্ন এবং আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেছে যেন কেউ বাদ না পড়ে। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারী, দরিদ্র, ভবঘুরে এবং অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠীর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, কর্মসূচিতে এখন কর্মক্ষেত্রে কভিড ভ্যাকসিনেশন সেন্টার, ঘরের কাছাকাছি ভ্যাকসিনেশন সেন্টার এবং সহজতর প্রবেশাধিকারের জন্য মোবাইল ভ্যাকসিনেশন ইউনিট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিশুদের নিরাপদ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্কুলের শিক্ষকদের অগ্রাধিকারভিত্তিক টিকাকরণও করা হয়েছিল।
২০২১ সালের শেষের দিকে আমরা আশা করছি কভিড-১৯ টিকার মাসিক উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি, টিকার অনেকগুলো বিকল্প সুলভ হবে এবং আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে সম্পূর্ণভাবে টিকাকরণ করা হবে।