।। মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ।।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়েই একটি আলোচিত শব্দ মানসিক স্বাস্থ্য। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বেড়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক বা তরুণদের মাঝেই নয়, শিশুদের মাঝেও বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন নানাভাবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাবের কারণে দেশে এখনো অবহেলিত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা।
নানান পেশা ও বয়সের মানুষদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি দেশের কিছু মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে আছে নানান রকমের সঙ্কট। একইসঙ্গে নেই পর্যাপ্ত জনবল। দক্ষ জনবল তৈরিতেও নেই কোনো উদ্যোগ। সর্বোপরি কোনো জোরালো প্রচারণা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝেও আছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা। জেলা ও উপজেলাভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা না থাকার কারণে মানুষ এখনো ঝুঁকছে ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া ও বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারের দিকে।
মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো-সংক্রান্ত সর্বশেষ জরিপ হয় ২০১৫ সালে। ওই জরিপ অনুযায়ী, দেশে মাত্র ২২০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এছাড়াও ৫০ জনের মতো প্রশিক্ষিত ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী থাকার বিষয়ে জানানো হয়।
২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাসেসমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট ফর মেন্টাল হেলথ সিস্টেমস রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী শূন্য দশমিক ৪৯ জন। এরমধ্যে প্রতি লাখে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন শূন্য দশমিক ০৭৩ জন, সাইকিয়াট্রিক নার্স শূন্য দশমিক ১৯৬ জন, মনোবিজ্ঞানী শূন্য দশমিক ০০৭ জন, সমাজসেবাকর্মী শূন্য দশমিক ০০২ জন, পেশাদার থেরাপিস্ট আছেন শূন্য দশমিক ০০৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী (সাপোর্ট স্টাফ, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, প্যারা-কাউন্সিলর ইত্যাদি) শূন্য দশমিক ০২৯ জন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এই ধরনের জরিপ না হওয়ায় বর্তমান মাঠ ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোর অবস্থার বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাও মনে রাখতে হবে যে জনসংখ্যা বৃদ্ধিও এতদিন থেমে থাকেনি, যেমনটা থেমে থাকেনি আনুপাতিক বিবেচনায় আক্রান্তের হারও।
মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে নানান রকমের বক্তব্য দেওয়া হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাধীনতার পরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন মানসিক স্বাস্থ্য আইন- ২০১৮, মানসিক স্বাস্থ্যনীতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশল পরিকল্পনা— যা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে সমতা ও ন্যায়বিচার, সমন্বিত সেবা, প্রমাণ-ভিত্তিক পরিচর্যা এবং মান নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো রাখার বিষয়ে জানানো হলেও যারা মানসিক চিকিৎসা সেবা দেবেন তাদের পদোন্নতি ও মানোন্নয়ন নিয়েও নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। সব মিলিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকির মুখে দেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র সরকারি বাজেট বাড়িয়েই নয়, প্রয়োজনে আলাদা ইউনিট গঠন করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে প্রান্তিক পর্যায়ে। একইসঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে চালাতে হবে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা। সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগণ, প্রবীণ ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এছাড়াও প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার পাশাপাশি জনগণকে দ্রুত এই পরিষেবা সম্পর্কে অবগত করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ
সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী দেশের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষজ্ঞ ও জনবল সঙ্কট। স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞসহ বর্তমানে প্রায় ৫০০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী আছেন। তবে সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা মাত্র ২৭০ জন। অর্থাৎ প্রতি ৯৩ হাজার রোগীর জন্য মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছে দেশে।
তবে এই বিশেষজ্ঞদের সেবাও কিন্তু মেলে না দেশের সব স্থানে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করতে থাকলেও দেশে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এখন পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
দেশের কিছুসংখ্যক সরকারি মেডিকেল কলেজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে আবাসিক রোগীদের জন্য ২০০ বেড সক্ষমতাসম্পন্ন। এছাড়াও বহির্বিভাগে সেবাদান করা হয়। এছাড়া মাত্র একটি ৫০০ বেডের মানসিক হাসপাতাল রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউটে পরিণত করার কাজ চলছে। তবে সেটি কবে থেকে চালু করা যাবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেশের কিছু বিভাগীয় শহরেও এখন পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায়ে মানসিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা বলা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থাঃ-
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ১৪ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগছে। এর মধ্যে ৫.৯ শতাংশ নিউরোডেভলেপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, ৪.৫ শতাংশ অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, বাকিরা কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার সহ অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত। এদের ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসা পান না।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিষণ্ণতা রোগে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উদ্বিগ্নতা রোগে ভুগছেন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়াও দেশের জনসংখ্যার ২.১ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যা, ০.৯ শতাংশের ঘুমের সমস্যা, ০.৭ শতাংশের ওসিডি, ০.৬ শতাংশের মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা ইত্যাদি রয়েছে। মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকাদের মাঝে নারীদের হার (১৭ শতাংশ) পুরুষের (১৬ দশমিক 😎 তুলনায় বেশি। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ কোনো চিকিৎসা পান না বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন বলেও জানানো হয় জরিপের ফলাফলে।
ধূমপানকারীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি প্রায় ৪১ শতাংশ পাওয়া যায় জরিপের ফলাফলে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের তথ্যানুযায়ী শহরের (১৮.৭%) চেয়ে গ্রামীণ এলাকার (১৬.২%) লোকদের মধ্যে মানসিক সমস্যা কম দেখা যায়। মানসিক রোগে আক্রান্ত এসব রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কুসংস্কারই সবচেয়ে বড় বাধা। কুসংস্কারে বিশ্বাসী নারীদের হার পুরুষের তুলনায় বেশি। যারা চিকিৎসা নেন তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন। বাকিরা সাধারণ চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এর মাঝে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৫৬ শতাংশের মধ্যে বিভিন্ন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যান ৩৩ শতাংশ। বাকি ২৩ শতাংশ আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি ইত্যাদি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কোভিড-১৯ মহামারিতে দেশের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ কোভিডের কাছে হার মেনেছে এবং অনেকই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিড মহামারির প্রভাব নিয়ে আনালস অব গ্লোবাল হেল্থ- ২০২০ শিরোনামের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে ৬৪ শতাংশ মানুষ বিষণ্ণতায়, ৮৭ শতাংশ মানুষ আতঙ্কজনিত ও ৬১ শতাংশ চাপে ভুগছেন। ব্যতিক্রম ঘটেনি বাংলাদেশেও। দেশে ২০২১ সালে জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে দুই হাজার ২৬ জন তরুণ-তরুণীর ওপর ‘আত্মহত্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তরুণদের ভাবনা’ শীর্ষক একটি জরিপ চালায় বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। এই জরিপে ১ হাজার ২৯৩ জন ছিলেন নারী, ৭৩১ জন পুরুষ এবং বাকি দুইজন তৃতীয় লিঙ্গের ছিলেন।
জরিপে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে তাদের মানসিক চাপ বেড়েছে। এ সময়েই আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছেন ২১ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ-তরুণী। ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছেন, তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি। ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বলেছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা তারা করেছেন, তবে তাতে বিফল হয়েছেন। ৮ দশমিক ৩ শতাংশের মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে, তারা আত্মহত্যার উপকরণও প্রস্তুত করেছেন কিন্তু শেষে পিছিয়ে এসেছেন।
এসব তরুণের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ বলেছেন, বিষণ্ণতার কথা কাছের মানুষকে জানাতে পেরেছেন। বাকি ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ বিষণ্ণতা বা মানসিক অস্থিরতা প্রকাশের জন্য কাউকে পাশে পাননি বলে উঠে আসে আচল ফাউন্ডেশনের জরিপে।
শুধুমাত্র তরুণ-তরুণীদের মাঝেই নয়, বিভিন্ন পেশাজীবীদের মাঝেও কোভিড-১৯ মহামারিতে বেড়েছে মানসিক অস্থিরতা। ২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর মানসিক প্রভাব নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক প্রভাব নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগ।
জরিপে দেখা যায়, কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রায় ২১ শতাংশ চিকিৎসক এবং ৬ শতাংশ সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী উদ্বেগে ভুগেছেন। এ ছাড়া ১৮ শতাংশ চিকিৎসক এবং প্রায় ৭ শতাংশ সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী বিষণ্ণতায় ভুগেছেন।
জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে যারা ছয় সপ্তাহের বেশি টানা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অনিদ্রার লক্ষণ বেশি পাওয়া গেছে। প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ চিকিৎসক এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্যকরই অনিদ্রায় ভুগেছেন। পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা ঘটনা-পরবর্তী উৎকণ্ঠায় ভুগেছেন প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ চিকিৎসক এবং প্রায় ২ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশের আগে থেকেই কোনো শারীরিক অসুস্থতা (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি) ছিল। এতে দেখা যায় প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ চিকিৎসক এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী অনিদ্রায় ভুগেছেন।
পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা ঘটনা-পরবর্তী উৎকণ্ঠায় প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ চিকিৎসক এবং প্রায় ২ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ভুগেছেন বলে জানানো হয় জরিপের ফলাফলে। এই জরিপের ফলাফল জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৯ সালের মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষের তুলনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি উদ্বেগ-বিষণ্ণতায় ভুগেছেন।
শুধুমাত্র কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেই দেশে একাধিক গবেষণাতেও উঠে আসে দেশে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে মহামারির সময়ের নেতিবাচক প্রভাব। আর্ক ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোভিড-১৯ মহামারিকালে করা গবেষণায় দেখা যায়, দেশে বিষণ্ণতার হার ৩২ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দেশিকাও তৈরি করেছে।
(লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বাংলা পোস্ট বিডিনিউজ ও সদস্য ডিইউজে )