শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সারা দেশে ৭৫ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গণটিকা প্রদানের এই কর্মসূচিতে এবারও টিকা দিতে পারেনি রাঙামাটির লংগদু উপজেলার দুর্গম গুরুসুতাং পাহাড়ের দুই গ্রামের বাসিন্দারা। এখানে লুংথাই পাড়ায় ১২ পরিবার এবং তাংপুই পাড়ায় ১৬ পরিবারের বসবাস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫০.৮৩ বর্গকিমি এলাকাজুড়ে লংগদু উপজেলার পূর্বপাড়ে গুলশাখালী ইউনিয়নের অবস্থান। এই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শেষ সীমানায় গুইছড়ি ও গুরুসুতাং গ্রামের পাহাড়চূড়ায় বসবাস করে ত্রিপুরা ও পাংখোয়া সম্প্রদায়ের কিছু পরিবার। যারা সবাই পাহাড়ে পাহাড়ে জুমচাষ আর প্রাকৃতিক বনের ওপর নির্ভর কারে জীবনযাপন করে। এখানে নেই কোনো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করা এই মানুষগুলো শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ও টিকা গ্রহণের সুবিধার কথা জানলেও যোগাযোগের দুর্গমতার কারণে ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তারা।
স্থানীয় যুবক লালা পাংখোয়া জানান, আমরা অনেক কষ্ট করে এখানে বসবাস করি। তবে প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে হাট বাজারে যাই। করোনাভাইরাসের কথা শুনি, কিন্তু কিভাবে ভ্যাকসিন নেব সেই বিষয়ে কোনো পরামর্শ পাই নাই।
আটাশ পরিবারের এই ছোট্ট দুটি গ্রামে সব মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ আছেন। যাদের ভ্যাকসিন প্রদান করার জন্য একদিনের একটি কর্মসূচি নিলে পাড়ার সবাই একসাথে মিলিত হতে পারে। এবং ইউনিসেফের শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাড়াকেন্দ্রেই এই কর্মসূচির আয়োজন করা সম্ভব। এমনটি জানালেন পাড়াকেন্দ্রের শিক্ষক মনি পাংখোয়া।
স্থানীয় মৌজা প্রধান (হেডম্যান) বিয়াকথাং পাংখোয়া জানান, আমরা এখানে যারা বসবাস করি সবাই জুম চাষি। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত। তবে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা আমাদের পাড়ায় একদিন কষ্ট করে আসলে সবাইকে এই ভ্যাকসিনের সুবিধা দেওয়া যাবে। আমরা সবাই সরকারের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানাই।
গত ফেব্রুয়ারির সাত তারিখ থেকে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এর পর গত সাত আগস্ট প্রথম দফায় গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। যার দ্বিতীয় ডোজ গত ৮ সেপ্টেম্বর এবং আজ মঙ্গলবার তৃতীয় বারের মতো (২৮ সেপ্টেম্বর) আবারো গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে গণটিকার এই কর্মসূচিতে দুর্গম গুরুসুতাং এলাকার পাংখোয়া পাড়ার কোনো বাসিন্দাই নিবন্ধন করেনি।
এ বিষয়ে গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু নাছির বলেন, দুর্গম পাংখোয়া পাড়া এবং ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের আওতায় আসেনি। তারা পাহাড়ের এমন গহীনে বসবাস করে যেখানে যাতায়াত কষ্টসাধ্য। তবে শিগগিরই স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে তাদেরকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অরবিন্দ চাকমা জানান, আমাদের কাছে তথ্য আছে দুর্গম কিছু এলাকার মানুষ টিকার আওতায় আসেনি। তবে এখনো যেহেতু পর্যাপ্ত টিকা মজুদ নাই তাই তাদের বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে।