মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

এখনও স্বপ্ন দেখেন তারা বুড়িগঙ্গা নিয়ে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ভিড় এড়িয়ে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে সারি সারি ডিঙ্গি নৌকা। দুই-পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাগুলো ছুটছে এপার-ওপার। কেউ কেউ ঘণ্টা হিসেবেও ভাড়া নেন নৌকাগুলো। এসব নৌকার মধ্যে একটি মো. আলাউদ্দিনের। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। জন্ম এই বুড়িগঙ্গার তীরেই। শান্ত এই নদীর বুকে নৌকা বেয়েই চলে সংসার। জীবনের আনন্দ-বেদনার অসংখ্য স্মৃতি এই নদীকে ঘিরেই। কুড়ি বছর আগে এই নদীতেই হারিয়েছিলেন ছেলেকে। তবুও নদীর মায়া কাটাতে পারেননি আলাউদ্দিন। মায়ার সঙ্গে মিশে আছে ক্ষোভও, আর সেই ক্ষোভের উৎসে আছে দূষণ। আজ রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব নদী দিবসে আলাউদ্দিনের মতো আরও কয়েকজন জানালেন বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে তাদের উদ্বেগ ও আশার কথা।

মাঝি আলাউদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ছেলেকে হারানোর পর নদীর ওপর যে ক্ষোভ ছিল তার, এখন তা মায়ায় পরিণত হয়েছে। আক্ষেপ করেন- একসময়ের ভরা যৌবনা বুড়িগঙ্গার কথা মনে করে। দখল আর দূষণে মুমূর্ষু এই নদীর জন্য উৎকণ্ঠিত তিনি। তার কথায়, মানুষ নিজে সচেতন না হলে এই নদীকে বাঁচানো যাবে না। মানুষকে সচেতন করতে সরকারেরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ- এমনটাই মনে করেন আলাউদ্দিন।

মাঝি-বুড়িগঙ্গামাঝি আলাউদ্দিন (বামে)

সরকারিভাবে বুড়িগঙ্গাকে দখল দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার কার্যকরী সমাধান মেলেনি। এখনও আলাউদ্দীনের মতো অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস এই বুড়িগঙ্গা। মায়ায় বাঁধা এই নদীর দখল-দূষণের প্রতিকার চান তারা।

বুড়িগঙ্গার দুই তীর দখল করে কল-কারখানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারও অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমাঝে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চললেও দখল বন্ধ হয় না। আর পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের কল-কারখানার কেমিক্যাল-আবর্জনা নদীটির জন্য ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’। পুরান ঢাকার বাসা-বাড়ি, দোকানপাটের আবর্জনারও বড় একটা অংশের ঠাঁই হয় বুড়িগঙ্গায়। ফলে ক্রমান্বয়ে নদী দূষণ বাড়ছেই।

বুড়িগঙ্গা

কথা হয় মো. আবুল কাশেম নামে আরেক মাঝির সঙ্গে। তিনি বলেন, বিগত ৩০ বছর ধরে আমি এই নদীতে। এটাই আমার ঘর-বাড়ি। শুরুতে যখন এই বুড়িগঙ্গায় আসছিলাম তখনকার চিত্রের সঙ্গে এখন অনেক পার্থক্য। তখন এই নদী আরও অনেক বড় ছিল। আমার বাপ-দাদাদের আমলে নবাব বাড়ির (আহসান মঞ্জিল) সামনে পর্যন্ত ছিল এই নদী। দখল হতে হতে বর্তমানে বুড়িগঙ্গা একেবারেই সরু হয়ে গেছে।

আর নদীর এই সংকীর্ণতার কারণেই প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে বলে মনে করেন এই মাঝি। তার ভাষ্য, মাঝেমধ্যে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা উল্টায়া যায়। কত ঝুঁকি নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত নৌকা চালাই, তা বলে বোঝানো যাবে না। আগে এই নদীর পানি অনেক পরিষ্কার ছিল। ঢাকা শহরের যতো ময়লা-আবর্জনা আছে তার বেশিরভাগই এই বুড়িগঙ্গায় এসে পড়ে। বৃষ্টির দিনে নদীর পানি বাড়লে পানি একটু পরিষ্কার হয়।

বুড়িগঙ্গা

বুড়িগঙ্গার তীরেই কথা হয় তিন টোকাইয়ের সঙ্গে। মিলন, রাবেয়া ও সুমন নামের তিন টোকাই বয়সে কিশোর। সুমন জানান, তারা তিনজনে বুড়িগঙ্গার সদরঘাট নদীবন্দর এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ কেজি প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি করেন। তাদের মতো আরও অনেকেই প্রতিদিন প্লাস্টিক কুড়িয়ে তাদের জীবন ধারণ করে।

নদীর ময়লা পানিতেই গোসল করছিল আরও কয়েকটি পথশিশু। নদীতে কখনও মাছ দেখেছে কিনা- জিজ্ঞাসা করতেই তাদের একজন বললো, ‘এই পানিতে মাছ কেন ব্যাঙও পাইবেন না।’

শুধু আলাউদ্দিন ও কাশেম মাঝি নন, তাদের মতো সংশ্লিষ্ট সকলেরই প্রত্যশা বুড়িগঙ্গাকে দখল-দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.