ব্যবহার করতে পারছে না ফুটপাত। অসাধু চক্র একটার পর একটা দোকান বসিয়েই যাচ্ছে। আবার সেই দোকান ‘ভাড়া’ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এসব ফুটপাতে চলতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নারীরা। ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশনের নেই কোনও উদ্যোগ। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদতেই অবাধে চলছে ফুটপাত বাণিজ্য।
মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মার্কেটগুলোর সামনে ফুটপাত বলতে কিছু নেই। হাঁটতে গেলেও জট লাগে। করোনা পরিস্থিতিতে এখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা রীতিমতো অসম্ভব। ফুটপাতগুলো কারা নিয়ন্ত্রণ করছে, কে ভাড়া তোলে এমন প্রশ্ন ছিল হকারদের কাছে। বেশিরভাগই মুখ খুলতে নারাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিদিন আড়াই শ’ টাকা ভাড়া, আর ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বিশেষ একটি পক্ষকে। বেচাবিক্রি হোক না হোক, ৩০০-৩৫০ টাকা প্রতিদিন দিতে হয়। জায়গাটি এক বছরের জন্য নিয়েছি। এর জন্য আবার অগ্রিম দিতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিরপুর এক নম্বরের মুক্ত বাংলা শপিং সেন্টার, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, বাগদাদ শপিং সেন্টার, ছিন্নমূল মার্কেট, কো-অপারেটিভ মার্কেট, কলেজ মার্কেটসহ আরও অনেক মার্কেটের সামনের ফুটপাতে স্থায়ী পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। প্রতিটি ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করে একজন ‘লাইনম্যান’। মিরপুর ১ নম্বরে লাইনম্যানের তালিকায় আছেন সুরুজ, নয়ন অলি, জাকির, ফারুক, এনামুল, আনোয়ার, পল্টু মিয়া, সেলিমসহ আরও কয়েকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন শুধু মিরপুর ১ নম্বরের ফুটপাত থেকেই চাঁদা ওঠে তিন লাখ টাকারও বেশি। যার একটা বড় অংশ চলে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটে।
ফুটপাতে অবৈধ ব্যবসার পেছনে সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনকে দায়ী করেছেন বাগদাদ শপিং সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন মোল্লা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ফুটপাতে এসব অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার জন্য সরাসরি তারা জড়িত। মার্কেটের সামনে ফুটপাত উৎখাত করতে চাই আমরাও। কিছু অভিযান চালানো হয়। এরপর আবার হকাররা বসতে শুরু করে। কেন অভিযান চালায়, আবার কীভাবে বসে এটা রহস্যের মনে হয়। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন দায়িত্বহীনতা দেখাচ্ছে।’
বিষয়টি অস্বীকার করে মিরপুর ১ নম্বরের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (উত্তর ৮ নম্বর ওয়ার্ড) কাশেম মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজি হয় না। আমির মোল্লা নিজেই মিরপুর এক নম্বরের ফুটপাতের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। তার সহযোগী কবিরের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দেন। প্রতিদিন টাকাও তোলেন তিনি।’
মিরপুর শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ ফুটপাতে চাঁদাবাজিতে জড়িত নয়। সিটি করপোরেশন দোকানের অনুমতি দেয়। বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবে। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে হকার উচ্ছেদ করি। পরে তারা আবার বসে।’
মিরপুর ১০ নম্বরে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে জড়িত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদরা। এমন অভিযোগ হকারদের। সেখানে লাইনম্যানের কাজ করছেন আমিনুল ফরহাদসহ আরও কয়েকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার বলেন, এখানে দোকান নিতে ককালীন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়। দৈনিক চাঁদা তো আছেই। আমাদের উঠিয়ে দিতে অভিযান চালানো হয়। কয়েকদিন বন্ধ থাকে। তারপর আবার ‘ভাই’দের সঙ্গে কথা বলে বসি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিদিন এখানেও গড়পড়ায় তিন লাখ টাকা চাঁদা ওঠে।
পথচারীদের অভিযোগ, এসব ফুটপাতে হাঁটতে গেলে পকেটমারদের আতঙ্কেও থাকতে হয়। বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বেশি। মিরপুর ১০ নম্বরে শপিং করতে আসা লামিয়া বলেন, এ ফুটপাত দিয়ে হাঁটাই যায় না। হকাররা দোকান বসিয়ে রেখেছে। ধাক্কাধাক্কি লেগেই থাকে। অনেকে ইচ্ছে করেই গায়ের ওপর এসে পড়ে। মিরপুর ১১ নম্বর থেকে আসা রোকন বলেন, ফুটপাত দিয়ে হাঁটার উপায় নেই। তাই মেইন রোডে নামতে বাধ্য হয়েছি।