একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মায়ের দুর্ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলাম। আমাদের এলাকায় বড় গাড়ি বা ট্রাক রাস্তার ছোট গাড়িকে কোনো তোয়াক্কাই করে না। মাহিন্দ্রে মায়ের সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন। ট্রাক চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী। মাহিন্দ্রে পেছন থেকে যখন ট্রাক ধাক্কা দেয়, মা ছিটকে পড়েন সড়কে। ওই অটোরিকশা রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায় আর ট্রাক তার ওপর পড়ে। মায়ের মাথায় চোট লাগে। সেখানেই মারা যান।’
ব্যানারে লিখলেই চালক সচেতন হবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে আসিফ বলেন, ‘মা আমাদের পরিবারের হাল ধরে ছিলেন। গ্রামে নতুন বাড়ির কাজ দেখতেই সেদিন বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর ওই বাড়ির কাজ আর খুব বেশি এগোয়নি।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ভাই থাকছে নানাবাড়িতে। আমি ঢাকায়। বাবা আলাউদ্দিন আহমেদ কাজের জন্য থাকছেন নারায়ণগঞ্জে। মা নেই বলে আমাদের পরিবারটা এখন প্রায় অচল হয়ে গেছে। আর কাউকে যাতে আমার বা আমাদের মতো কষ্ট পেতে না হয়। ব্যানার দেখে কেউ যদি সচেতন হয়, এ আশা করা ছাড়া তো আর আমার করার কিছু নেই।’
আসিফের এ ব্যানারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ঘুরছে। আসিফ বললেন, ‘এভাবে ব্যানার লেখার আইডিয়াটি আমার নিজের না। ফেসবুকেই আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক ওরফে সুমন তাঁর ফুফাতো ভাই মারা যাওয়ার পর এ ধরনের একটি ব্যানার লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। আমি বাড়িতে গিয়ে প্রায় কাছাকাছি রকমের একটি ব্যানার লিখে গাছে ঝুলিয়ে দিই। আমার ফেসবুকের স্টোরিতে দিই। তারপর অনেকেই তা বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করছেন। এতে কিছুটা হলেও সচেতনতা বাড়ছে।’
আসিফ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার জন্য মায়ের কাছ থেকে দূরে ছিলেন। মাকে সেভাবে সময় দিতে পারেননি। আক্ষেপ করে বললেন, মায়ের সঙ্গে তাঁর কোনো ছবিও নেই। আর মায়ের বয়সই–বা কত হয়েছিল, খুব বেশি হলে ৪৫ বছর। ফেসবুক প্রোফাইলে আসিফের নামের পরে ‘আম্মু’ লিখে দুই পাশে লাভ চিহ্ন দিয়ে রেখেছেন। মনের যন্ত্রণা লাঘবে ফেসবুকেই লিখেছেন, মা–হীন শূন্য পৃথিবী…।
আইনজীবী সায়েদুল হক গত ১২ আগস্ট তাঁর ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি যে ব্যানারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, তাতে লেখা, ‘দয়া করে আস্তে গাড়ি চালান। এই জায়গাতে অ্যাক্সিডেন্টে আমার ভাইকে হারিয়েছি’। এ পোস্টে লাইক বা বিভিন্ন ইমো দিয়েছেন এক মিলিয়নের বেশি মানুষ। হাজার হাজার মন্তব্য এবং শেয়ার হয়েছে তাতে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর হাইকোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক প্রথম আলোকে জানান, গত ৭ এপ্রিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন তাঁর ফুফাতো ভাই আমির খান। এই ভাইয়ের বয়স হয়েছিল মাত্র ২৬ বছর। দুর্ঘটনার সময় তিনি মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ছিলেন। ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়কের পাশে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়াতে ভাইয়ের ছবি দিয়ে সাইনবোর্ডটি লাগান।
সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে।
আমার ভাই মোটরসাইকেলের চালককে আস্তে গাড়ি চালানোর জন্য বলতে পারত। হয়তো সে তা বলেনি। চালক বেঁচে থাকলেও মাত্র ২৬ বছর বয়সে আমার ভাইকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হলো। চালক ও যাত্রীর সচেতনতা ছাড়া এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করার আর তো কোনো উপায় নেই।’