ইস্তাম্বুল খাল খননের পিছনের উদ্দেশ্য হিসেবে বসফরাস প্রণালীর নিরাপত্তা এই প্রণালীকে মারাত্মক ঝুঁকি থেকে বাঁচানো এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জনকে দেখানো হলেও আমার মনে হয় আরেকটি বড় এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিহিত আছে এই খাল খননের পেছনে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন গৌণ কারণের মধ্যে থাকতে পারে। তবে আমার কাছে মুখ্য কারণ হল তুরস্কের নিরাপত্তার জন্য এরদোগান যে বিশাল ছক এঁকেছেন তার অংশ হিসেবে তিনি তুরস্কের পশ্চিমের নিরাপত্তা দেওয়ালকে আরেকটু পশ্চিমে নিয়ে যাচ্ছেন। ইস্তাম্বুলকে পশ্চিম থেকে আসা হুমকি থেকে বাঁচানোর প্ল্যান হিসেবে এই খাল খনন করছেন এরদোগান।
আমরা যদি তুরস্কের গত কয়েক বছরের সামরিক এবং প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা যদি একটু ঘেঁটে দেখি তাহলে দেখা যাবে, এক দিকে যেমন সামরিক দিক থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র তৈরি করছে অন্যদিকে এদেশের প্রতিরক্ষা রেখা বা লাইন অফ ডিফেন্সকে তিনি তুরস্কের বাইরে নিয়ে গেছেন। যেমন দক্ষিণ পশ্চিমে লাইন অফ ডিফেন্স হলো লিবিয়া, তুরস্ক সিরিয়া সীমান্তের লাইন অফ ডিফেন্স নিয়ে গেছেন সিরিয়ার ৩০ কিলোমিটার ভিতরে।
তুরস্ক ইরাক সীমান্তের লাইন অব ডিফেন্স ইরাকের সীমানার ৪০-৫০ কিলোমিটার ভিতরে। পূর্ব দিকের লাইন অফ ডিফেন্স আজারবাইজানের নাগারনো কারাবাখ অঞ্চলে উত্তর দিকের লাইন অফ ডিফেন্স হলো ইউক্রেন। আর এই লাইন অফ ডিফেন্সকে রক্ষা করতে তিনি বিভিন্ন দেশে করেছেন সামরিক ঘাঁটি। যেমন সোমালিয়া, লিবিয়া, সুদান, আজারবাইজান, কাতার ইত্যাদি। অর্থাৎ তিনি ওইসব দেশে হয়তো সামরিক ঘাঁটি করেছেন নয়তো সৈন্য উপস্থিত রেখেছেন।
তুরস্কের পশ্চিমের ডিফেন্স লাইনকে তিনি কিন্তু দেশের বাইরে সরিয়ে নিতে পারেননি। আর ওখানে আছে গ্রীস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমানা। তাই ওই দিকে প্রতিরক্ষা রেখাকে দেশের মধ্যেই যতটুকু সম্ভব সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন এরদোগান।
আর নিজের দেশের মধ্যের লাইন অফ ডিফেন্স সরিয়ে নিতে প্রচুর একটি জনবলকে সরিয়ে নেওয়া দরকার। যেমন ইস্তাম্বুলের পশ্চিম দিকে তুরস্কের জনসংখ্যা বসতি খুব একটা নেই। আপনি যদি কনভেনশনাল যুদ্ধে লিপ্ত হন তাহলে সবচেয়ে বড় ডিফেন্স ওয়াল হলো জনসংখ্যা। কম জনসংখ্যার কোন শহর দখল করা যত সহজ জনবহুল কোন এলাকা দখল করা ততই কঠিন। কারণ ওখানে প্রতিরক্ষায় নিযুক্ত বাহিনী ছাড়াও সাধারণ জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে। যেগুলো আমরা দেখেছি সিরিয়ায়, লিবিয়ায়, নাগারনো কারাবাখে, ইয়েমেনে বা আফগানিস্তানে। কম জনবসতিপূর্ণ এলাকা দখল করা যত সহজ জনবহুল কোন এলাকা দখল করা ততটাই কঠিন।
তাই এই ইস্তাম্বুল খাল খনন করার মাধ্যমে এরদগান ইস্তাম্বুলের নিরাপত্তার সীমা বা ডিফেন্স লাইন বর্তমানের ইস্তাম্বুল থেকেও আরও ২০-২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে নিয়ে গেলেন। কারণ ওখানে গড়ে উঠবে নতুন জনবসতি। জনবহুল একটি অঞ্চলে পরিণত হবে সেটি। তাই পশ্চিম দিক থেকে ইস্তাম্বুলে কোনো আক্রমণ আসলে আগে ওই এলাকা ভেদ করে তার পরে দখল করতে হবে। সুতরাং আমার মনে হয়, অন্যান্য অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ছাড়াও এরদোগানের তুরস্কের নিরাপত্তা নিয়ে আঁকা অনেক সুদুর প্রসারি কোন ডিফেন্স ম্যাপেরই অংশ এই ক্যানাল ইস্তাম্বুল বা ইস্তাম্বুল খাল।
যদিও এ বিষয়ে কোথাও খোলামেলা কোন আলোচনা হয়নি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ইস্তাম্বুল খালেরপেছনে আসলে সামরিক সুরক্ষার যে গোপন বিষয়টি নিহিত আছে তা হলো এই ডিফেন্স লাইন।