তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নে রক্তি নদীর ওপর আনোয়ারপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে সেতু নির্মিত হয় ২০১১ সালে। ১২৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ‘আনোয়ারপুর সেতু’ নামে পরিচিত। যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় ওই বছরের ১ অক্টোবর। আনোয়ার পুর সেতুটি চালু হওয়ায় জেলার পশ্চিম দিকের হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের জেলা ও বিভাগীয় সদরে যাতায়াতের পথ সহজ হয়। কিন্তু সেতুটির নীচ দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক বাল্কহেড (মালবাহী বড় নৌযান) চলাচলের সময় খুঁটিতে ধাক্কা লাগে। এতে করে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি।
স্থানীয় এলাকাবাসী সেতুটির নীচ দিয়ে বাল্কহেড চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি ইউনিয়নের বালিজুরী গ্রামের একজন বাসিন্দা সেতুটি রক্ষায় এর নীচ দিয়ে বাল্কহেড (বড় নৌযান) বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালের ১ অক্টোবর সেতুটির যানবাহন চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। আনোয়ারপুর সেতুটি চালু হওয়ায় সুনামগঞ্জের সাথে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এতে করে তাহিরপুর ছাড়াও ধর্মপাশা, বিশম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও নেত্রকোণার জেলার একাংশের বাসিন্দারা সহজে সুনামগঞ্জে যাতায়াত করতে পারেন। সেতুটির নীচ দিয়ে প্রতিদিন এক শরও অধিক বড় নৌযান (বাল্কহেড) প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। একটি বাল্কহেডে ২০ হাজার ফুট পর্যন্ত পাথর/বালু পরিবহন করা হয়। বড় নৌযান সেতুর নীচ দিয়ে যাতায়াতকালে সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা লাগে। এতে করে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। এ সকল বাল্কহেড সেতুটির ৫ কিলোমিটার উত্তরে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড় এলাকা থেকে বালু/পাথর পরিবহন করে থাকে।
উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের বালিজুরী গ্রামের বাসিন্দা ফেরদৌস আলম গত ২৮ জুন এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি বলেছেন, বাল্কহেড নৌকা বালু পাথর বোঝাই করে সেতুটির নীচ দিয়ে চলাচলের সময় সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা লাগে। বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রতিদিন সেতুটির খুঁটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ সকল বড় নৌযানের আঘাতে যেকোনো সময় সেতুর খুঁটি ভেঙে যেতে পারে। তিনি সেতুর নীচ দিয়ে বড় মালবাহী নৌযান (বাল্কহেড) চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। আবেদনের অনুলিপি তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদস সদস্য মো. একরামুল হুদা জানান, সেতুর খুঁটিতে ধাক্কা লেগে একাধিক বাল্কহেড ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব ধাক্কায় খুঁটিতে স্থাপিত লোহার পাত ভেঙে পড়েছে। বাল্কহেডের ধাক্কায় যেকোনো সময় সেতুর খুঁটি ভেঙে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সেতুর নীচ দিয়ে বাল্কহেড চলাচল বন্ধের জন্য তারা মানববন্ধনও করেছেন।
বালিজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, আনোয়ারপুর সেতুর নীচ দিয়ে বাল্কহেড চলাচলের কারণে সেতুটি চরম ঝুঁকিতে আছে।
এই নৌপথে চলাচলকারী অধিকাংশ বাল্কহেড কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর নৌ-পরিবহন শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অন্তর্ভুক্ত। ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বলেন, রক্তি নদীর ওপর স্থাপিত এ সেতুটির দৈর্ঘ্য কম থাকায় নদীতে স্থাপিত খুঁটির একটির সাথে আরেকটির দূরত্বও কম। কিন্তু বাল্কহেডগুলো বড় হওয়ায় চলাচলে খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগবে।
তিনি আরো জানান, একটি বাল্কহেড দিয়ে ২০ হাজার ফুট পর্যন্ত বালু/পাথর পরিবহন করা হয়ে থাকে। আনোয়ার সেতুর নীচ দিয়ে বাল্কহেড চলাচলে সেতু ও নৌযান দুটোই চরম ঝুঁকিতে থাকে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, আবেদনটি এখনো আমি পাইনি।