সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় সোমবার লকডাউন জারি করে সরকার। পরদিন মঙ্গলবার থেকেই কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে চিকিৎসা ও জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় আসা মানুষ বাড়ি ফিরতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বরগুনা থেকে সোমবার ঢাকা আসেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল সাইদ। ভ্যাট নিবন্ধনের জরুরি কাজ সেরে মঙ্গলবার বাড়ি ফেরার কথা। হঠাৎ লকডাউনের কারণে লঞ্চ বন্ধ থাকায় বাড়ি যেতে পারেননি। বুধবার সকালে সড়ক পথে যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজিতে মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
তিনি সড়কপথে তার অভিজ্ঞতার কথা যুগান্তরকে জানান। বরগুনা কোর্টের এ তরুণ আইনজীবী জানান, দূরাপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় যাত্রাবাড়ী থেকে জনপ্রতি ২০০ টাকায় শীতলক্ষ্যা ব্রিজ পর্যন্ত সিএনজি ঠিক করেন। যাত্রবাড়ী থেকে সিএনজি ছাড়তে স্ট্যান্ডে কতিপয় ব্যক্তি ২০০ টাকা চাঁদা দেন চালক। পরবর্তীতে পোস্তগোলা ব্রিজে সিএনজি পৌঁছালে এর শেষ অংশে হাসনাবাদ এলাকায় পুলিশ সিএনজি থামায়। সেখানে চালক ১০০ টাকা দিতেই সিএনজি ছেড়ে দেয় পুলিশ।
তিনি আরও জানান, শীতলক্ষ্যা ব্রিজ পার হওয়ার পর আবার সেখান থেকে অটোরিকশায় ওঠেন জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায়। মাওয়ার চার লেনের রাস্তায় না উঠে অটোরিকশাটি পাশের সড়ক দিয়ে আবদুল্লাহপুর এলাকায় গেলে শ্রমিক লীগের সদস্যদের ২০০ টাকা চাঁদা দেয় অটোরিকশাটি।
পরে ফেরিতে উঠে টিকিট কেটে ফরিদপুর অংশে পৌঁছান। সেখান থেকে দুইজন ১ হাজার টাকা ভাড়ায় বরিশালে পৌঁছান।
বরগুনা কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, হঠাৎ করে লকডাউন দেওয়ায় আমি ঢাকায় এসে বিপদে পড়েছি। পথে পথে সরকার দলীয় ব্যক্তি পরিচয়ে চাঁদাবাজির কারণে সিএনজি বা অটোরিকশায় দ্বিগুণের বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
আইনজীবী আবদুল্লাহ আল সাইদ বলেন, সড়কপথে চাঁদাবাজদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। তাদের কারণে সাধারণ যাত্রীরা পথে পথে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে লকডাউন জারি করলে এমন হয়রানির শিকার হতেন না সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন থেকে ঢাকায় চিকিৎসা করতে আসতে বেগ পেতে হয়েছে অসুস্থ এক তরুণকে। এ ছাড়া ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভোট থাকায় পর দিন ঢাকা ফিরতে ভোগান্তি পেতে হয়েছে ভোট দিতে যাওয়া ব্যক্তিদের। তাদের একজন ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ লকডাউনের কারণে ঢাকায় ফিরতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভোলা থেকে ট্রলারে তিনি লক্ষ্মীপুর এসেছেন। সেখানে থেকে সড়ক পথে ভেঙ্গে ভেঙ্গে কোনোরকমে ঢাকায় আসেন।
তিনি বলেন, ঢাকায় সরাসরি বাস না থাকায় পথে পথে ভোগান্তি শিকার হয়েছি। পথে বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার সাত জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকরা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।