মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

মাতৃত্বকালীন ভাতা স্বামী নেই ১০ বছর, তবুও পাচ্ছেন!

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২ জুন, ২০২১

ছাড়াছাড়ি হয়েছে অন্তত ১০ বছর আগে। এখন তিনি থাকেন বাবার বাড়িতে। অথচ চেয়ারম্যান তাকে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। নিজ ক্ষমতাবলে তার ভতিজার স্ত্রীকেও মাতৃত্বকালীন ভাতার সরকারি কার্ড করে দিয়েছেন। ভাতিজার স্ত্রীও সর্বশেষ ১২ বছর আগে গর্ভবতী ছিলেন। ঘটনা জানাজানি হলে এভাবে ভাতা দেওয়ার কথা চেয়ারম্যান নিজে স্বীকারও করেছেন।

এ ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার সারিয়াকান্দির বেহাইলই ইউনিয়ন পরিষদে। সংরিক্ষত তিন নারী সদস্য ও ওয়ার্ড সদস্যরা চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাদের দাবি, বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বরাবরই অনিয়ম করেন।

গত সোমবার (৩১ মে) উপজেলার কড়িতলা বাজারে ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় ওই দুজন নারীর ভাতার টাকা তুলতে আসলে চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জনতার তোপের মুখে পড়েন। তখন থেকেই এলাকায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা হওয়া জরুরি।

স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারীর নাম চায়না বেগম (৪২)। তিনি বোহাইল ইউনিয়নের চরমাঝিরা গ্রামের বাসিন্দা। চেয়ারম্যানের ভাতিজা বউয়ের নাম মিনতি বেগম (৪৫)। মিনতির স্বামীর নাম আলমগীর হোসেনে। তাদের বাড়ি বেহাইল চরে।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এতে মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগীদের শর্ত ও যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো নারী প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভধারণের সময় যেকোনো একবার ভাতার আওয়াতার আসবেন। বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার বেশি হবে। মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে হবে। দরিদ্র বা প্রতিবন্ধী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কেবল মাত্র বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বসবাস করেন। নিজের বা পরিবারের কৃষি জমি কিংবা মৎসজমি নেই এমন নারী। উপকারভোগী নির্বাচনের সময় অবশ্যই ওই নারীকে গর্ভবতী থাকতে হবে। মাতৃত্বকালীন নারীদের তিন বছর প্রতি মাসে ৮০০ টাকা হারে মাসিক ভাতা পাবেন।

সারিয়াকান্দির বেহাইলই ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোহাইল ইউনিয়নের চর মাঝিরা গ্রামের চায়না বেগম ১০ বছর পূর্বে একই চর গ্রামের ইমদাদুল হকের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তখন থেকে চায়না একাই বাবা মোজা প্রামানিকের বাড়িতে বসবাস করেন। তবে গত ছয় মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার নামে একটি মাতৃত্বকালিন ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও একই ইউনিয়নের বেহাইল চরের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মিনতি বেগম গর্ভবতী না হলেও মার্তৃত্বকালীন ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। মিনতির সর্বশেষ ছেলে সন্তানের বয়স প্রায় ১২ বছর। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের আপন বড় ভাই সাহাদাত হোসেনের ছেলে আলমগীরের স্ত্রী।

বোহাইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রহিমা বেগম, সাহিদা বেগম ও নাছিমা বেগম অভিযোগ করেন, ‘গত ডিসেম্বরে পরিষদের সমন্বয় সভায় চর এলাকার ৬০ জন গর্ভবতীর নামে ভাতাকার্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাতা পাওয়ার জন্য প্রকৃত নারী নির্বাচন করার বিষয়টিও উঠে আসে সভায়। কিন্তু চেয়ারম্যান স্বামী পরিত্যাক্তা ও নিজের ভাতিজার স্ত্রীকে ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন। এতে আমরা খুবই লজ্জিত। চরের প্রকৃত গর্ভবতী নারীদের নাম বাদ দিয়ে তাদের নাম দেওয়ায় এর সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।’

প্যানেল চেয়ারম্যান ও এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাদশা আকন্দ ও দুই নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ও মহিলা সদস্যদের দুইটি করে গর্ভবতী নারীর নাম দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান কোনো কথা রাখেননি। তিনি মনগড়াভাবে গর্ভবতী নারীদের নামের তালিকা তৈরি করেছেন।’

তবে মনগড়াভাবে তালিকা তৈরির কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘আমি সবার মতামত নিয়ে তালিকা করেছি। যাদের নামের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ আমার ভাতিজার স্ত্রী মিনতি বেগম ও স্বামী পরিত্যাক্তা চায়না বেগমের নাম আমার অজান্তে তালিকায় উঠেছে।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেল মিয়া বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হবে।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.