সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন

বজ্রপাতে মৃত্যু কেন বাড়ছে বাংলাদেশে

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১

বজ্রপাতে মৃত্যু ও আহতের ঘটনা বাড়ছে। তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, প্রচুর মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর রেডিয়েশন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী দখলসহ নানা কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। বজ্রপাত বাড়ার সঙ্গে বিশ্বময় তাপমাত্রা পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গত এপ্রিল থেকে প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত দেড় মাসে বজ্রপাতে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিলে ১১০ জন ও মে মাসে (১৯ মে পর্যন্ত) ৫৭ জন মারা গেছে।  দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ডিজাস্টার ফোরামের সমন্বয়কারী মেহেরুন নেসা বলেন, গত দেড় মাসে বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা গেছেন সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং গাইবান্ধা জেলায়। আর বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে সিলেটে। বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই খোলা মাঠে কাজ করছিলেন বা মাছ ধরছিলেন।  কালবৈশাখীর কারণে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে এপ্রিল ও মে মাসে। বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বলেও ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ডিজাস্টার ফোরামের প্রতিবেদন মতে, বজ্রপাতের কারণে একজন মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে আশেপাশের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হিসাব। আর বজ্রপাতে আহতদের প্রায় সবাই স্থায়ীভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাওর ও বিস্তীর্ণ বিল এলাকার জেলাগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।  বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা মাঠে যারা কাজ করেন, নৌকায় বা পথঘাটে চলাচল করেন, তারাই বজ্রপাতের শিকার হন বেশি।  দেশে গত কয়েক বছরে বজ্রপাতের ঘটনা ১৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। দেশে গত এক দশকে অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমে বেড়ে যাওয়া এবং এর প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। এই ব্যাপারে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা) ও লাইটেনিং এরেস্টর (বজ্রপাত নিরোধক) স্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া যায়।  আর এ কাজটি সরকারকে করতে হবে। পাশাপাশি মানুষকে আরও বেশি সচেতন ও সাবধান হতে হবে।  কালবৈশাখীর এই সময়ে আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে, খোলা মাঠে-ঘাটে কাজ করা যাবে না। বাসাবাড়িতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।  তাছাড়া  মাঠে-ঘাটে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগালে তা এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, এতকিছুর পরও কৃষককে ধান কাটতে মাঠে যেতে হবে। তাই বজ্রপাতের প্রকোপ কমাতে হাওর ও বিল অঞ্চলে মুঠোফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগিয়ে বজ্রপাতের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।  মুঠোফোন কোম্পানিগুলো তাদের করপোরেট দায়িত্বের অংশ (সিএসআর) হিসেবে কাজটি করতে পারে।

মুঠোফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগানোর বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেন বলেন, টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগানোর বিষয়ে সরকারিভাবেও বিবেচনা করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটি লাগানোর পরে একটি টাওয়ার মাত্র ৯০ মিটার এলাকা কাভার করবে।  এর একেকটি যন্ত্রের দাম প্রায় সাত লাখ টাকা।  কাভারেজ এলাকার তুলনায় এটা যথেষ্ঠ ব্যয়সাপেক্ষ।  তাই পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। বর্তমানে বজ্রপাত এলাকা বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি সেসব এলাকায় নতুন গাছ লাগানো এবং বড় গাছ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণামতে, আমাদের প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয়।  বাংলাদেশ পৃথিবীর বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।  তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।

বুয়েটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে এপ্রিল থেকে জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়।  সাধারণত আবহাওয়াতে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায় ১২ শতাংশ।  এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাস আমাদের দেশের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এই সময়ে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড়ও হয়ে থাকে।  তাই প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাতের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে।

উল্লেখ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল এই এগারো বছরে দেশে বজ্রপাতে মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭৯ জন।  ২০২০ সালে মারা বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৯৮ জন।  তবে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে ২০১৮ সালে, ৩৫৯ জন।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.