প্রভাবে স্থবিরতা এসেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বাঁশশিল্পে। এখন রমজান মাস। এসময় বাঁশ দিয়ে তৈরি লাচ্চা-সেমাই রাখার খাঁচির চাহিদা বেশি থাকে। ফলে প্রতিবছর এসময়ের অপেক্ষায় থাকেন খাঁচির কারিগররা।
ধুনটের খাঁচি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য এলাকায় বিক্রি হয়। দামও মেলে আশানুরূপ। কিন্ত করোনার থাবায় এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটল। এবার খাঁচি তৈরির ৯০ শতাংশ কারিগর বেকার বসে আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি দোকানে লাচ্ছা সেমাই রাখার জন্য ব্যবহার হয় বাঁশের তৈরি খাঁচি। গত বছরও এই সময় কারিগররা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাঁশের তৈরি খাঁচি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। খাঁচির কারিগররা ঈদের বাজার ধরার বিষয়টিকে মাথায় রেখে কাজ করেছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গৃহস্থালীর কাজ সম্পন্ন করে এ কাজে সহায়তা করেছেন।
জীবনের শুরু থেকেই বাঁশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এসব বাঁশশিল্পীদের। যুগ যুগ ধরে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বানাতে পারদর্শী তাঁরা। এ শিল্পের নিপুণ কারিগর তাঁরা। এটিই তাঁদের পেশা ও নেশা। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে কাটা সোনালি বাঁশের এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন কারিগররা। উপজেলার পাকুড়িহাটা, নলডাঙ্গা, কান্দুনিয়া, দাঁড়াকাটা, চালাপাড়া, বেলকুচি ও বাঁশহাটাসহ ২০ গ্রামের মানুষের জীবিকার পথ বাঁশের সামগ্রী তৈরি করা। প্রায় ৫ হাজার কারিগর এ কাজের সঙ্গে জড়িত।
বাঁশশিল্পের কারিগররা জানান, সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তৈরি করলেও ঈদের সামনে খাঁচি তৈরির কাজ বেশি করা হয়। লাচ্ছা সেমাই কারখানার মালিকরা ঈদের আগে খাঁচির অর্ডার দেন। তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী খাঁচি তৈরি করে দেওয়া হয়। এই খাঁচি বিক্রির জন্য হাট-বাজারে যেতে হয় না। কারখানার মালিকরা গ্রামে এসে খাঁচি কিনে নিয়ে যান। কিন্ত করোনা দুর্যোগে লাচ্চা সেমাই তৈরির বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ থাকায় এবার খাঁচির চাহিদা নেই।
দাড়াকাটা গ্রামের খাঁচি তৈরির কারিগর শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে ঈদকে ঘিরে খাঁচি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। কিন্ত এবার খাঁচির কাজের অগ্রিম অর্ডার পাইনি। তবে এখানকার কয়েকটি গ্রামের কারিগররা সামান্য কিছু খাঁচির অর্ডার পেয়ে কাজ করছেন। ভালো মানের একটি বাঁশ দিয়ে তিন-চারটি খাঁচি তৈরি করা যায়। একজন দক্ষ কারিগর দৈনিক চার-পাঁচটি করে খাঁচি তৈরি করেন।