১লা মে। আজ বিশ্বজুড়ে দিনটি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে যে স্ফুলিঙ্গের জন্ম হয়, পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। প্রতি বছর ১লা মে শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি, ভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের পালিত হয়।
হাজার বছর ধরেই নানা দিবস হিসেবে ১লা মে’কে পালন করেছে মানুষ। সে হিসেবে বলা যায়, মে মাসের প্রথম দিনে উৎসব উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরোনো। তবে, ১৮৮৬ সালের ১লা মে আগের সমস্ত ইতিহাসকে ছাপিয়ে যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় শ্রমিকদের বিক্ষোভ।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবে শুরু হলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দীর্ঘ কর্মঘণ্টার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল হাজারো পুরুষ, নারী ও শিশু শ্রমিক। কারখানায় শ্রমিকদের কাজ করতে হতো ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। কিন্তু, সে তুলনায় মজুরি ছিল খুবই কম।
কর্মস্থলের এই অমানবিক পরিস্থিতির অবসানে শিকাগোর একদল শ্রমিক ১৮৮৪ সালে দাবি তোলে, ১৮৮৬ সালের ১লা মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা ধরে আইন পাস করতে হবে। দাবির পক্ষে শুরু হয় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। কিন্তু, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কোনটাই কানে তোলে না মালিকপক্ষ।
১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামে ৩ লাখ শ্রমিক। অচিরেই কাজ প্রত্যাহার করা শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখে। ৩রা মে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ৪ঠা মে শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন অগাস্ট স্পাইস। হঠাৎই দূরে দাঁড়ানো পুলিশের ওপর বোমা হামলা হলে নিহত হয় ৭ পুলিশ। শুরু হয় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ। সংঘর্ষে ১১ শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ১৮৯০ সালে গড়ে ওঠে সমাজতান্ত্রিক ও লেবার পার্টিগুলোর নতুন জোট ‘সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল’। হে মার্কেটে ‘শহিদ’দের সম্মানে সমাবেশের ডাক দেয় ওই জোট। সাড়া দিয়ে ওই বছর লন্ডনে ১লা মে ৩ লাখেরও বেশি লোক এক সমাবেশে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা নিশ্চিতের পক্ষে বিক্ষোভ করে। তবে, মে দিবস আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯০৪ সালে।
‘সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিনিধিদের ষষ্ঠ কংগ্রেসের আয়োজন করা হয় ওই বছরের ১৪ থেকে ১৮ আগস্ট। স্বীকৃতি পায় শ্রমিক দিবস।