ভৈরবের আগানগরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জোড়া খুন ও তিন শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লোটপাটের ঘটনায় পৃথক ৬ শতাধিক লোককে আসামি করে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মামলা ২টি তদন্তের জন্যে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর পরই নিহত মকবুলের ভাই আক্কাছ মিয়া ও নিহত পাভেলের ভাই শেখ উজ্জল বাদী হয়ে ২ শতাধিক লোককে আসামি করে ভৈরব থানায় পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, লুটপাট-ভাঙচুর ও নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল মোবারক মিয়া, আকতার মিয়া ও আওয়াল মিয়া বাদী হয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। ৩ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ৪৩৫ জন এবং অজ্ঞাত ২০-২৫ জন । তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে নতুন করে যেন আবারও সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে সেজন্য এলাকায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল শনিবার সকালে খলাপাড়া গ্রামে ধানের খড় সরানোকে কেন্দ্র করে খলাপাড়ার নিহত মকবুল ও আক্তারের মাঝে কথাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লোকজন উভয়পক্ষের সাথে যোগ দেন। পরে সংঘর্ষ পুরো খলাপাড়া ও লুন্দিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক পক্ষের মকবুল ও পাভেল গুরুতর আহতসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি। লুটপাট করা হয় প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। পরে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মকবুল ও পাভেল মারা যান। এ সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সংঘর্ষে মকবুল ও পাভেলের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মকবুল ও পাভেল সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ও ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তারা মিয়া ও বিপাশা।
বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে । গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন ২ গ্রামের কমপক্ষে ২ সহস্রাধিক পুরুষ। পাশাপাশি শিশু-কিশোরী, যুবতি ও বৃদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন গ্রামের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। তবে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। ফের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসীর। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় ১ হাজার হেক্টও জমির পাকা ধান ঘরে তেলা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি মো. শাহিন জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লুন্দিয়া ও খলাপাড়ায় ২টি খুনের ঘটনায় অন্তত ২ শত জনকে আসামি করে পৃথক ২টি এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক ৩টিসহ মোট ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। আসামিরা বাড়িতে না থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে অভিযান অব্যাহ আছে। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।