সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস পদ্মা সেতুর

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

সূর্যালোকে দেখা একটি বিশালাকার স্বপ্ন। পুরো দেশকে জাগিয়ে তোলার একটি প্রয়াস। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা এবং বেনাপোল স্থলবন্দর এই অঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় কয়েক কোটি মানুষের বাস। ভেবেছেন কি কখনো বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কেন এখনো কোনো ভারি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি? দেশের সবচেয়ে বড় নদী পদ্মা। আর এই পদ্মাই দক্ষিণকে রেখেছিল আলাদা করে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করাই এ সেতু তৈরির উদ্দেশ্য। এ জন্য একুশ শতকের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হাতে নেয় বাংলাদেশ।

উত্তাল ওই পদ্মা পেরিয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা মানেই এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের দুর্দশার চিত্র। কিন্তু ভাঙ্গন কবলিত এ সর্বনাশা সর্বগ্রাসী পদ্মার বুকে বিস্ময়কর এই সেতু নির্মাণ উন্নয়নশীল বাংলাদেশের পক্ষে কতটা সহজ? কতটা চ্যালেঞ্জ?

চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেড (সংক্ষেপে এমবিইসি) মূল সেতুর কাজ করছে। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সংক্ষেপে সিআরইসি)-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমবিইসি। মেজর ব্রিজ প্রতিষ্ঠানটি পদ্মা সেতু ছাড়াও বাংলাদেশে অরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন, কুড়িল উড়ালসেতু, দপদপিয়া ব্রিজ, তৃতীয় কর্ণফুলী ব্রিজ ইত্যাদি। এছাড়াও নিজেদের দেশ চীন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থাপনা নির্মাণ করে খ্যাতি কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে- ভিয়েতনামে ‘হ্যানয় মেট্রো লাইন ২এ’, মঙ্গোলিয়ায় ‘উলানবাতর নিউ ইন্টারন্যাশাল এয়ারপোর্ট হাইওয়ে প্রজেক্ট’, ইন্দোনেশিয়ায় ‘জাকার্তা-ব্যান্ডাং হাই স্পিড রেলওয়ে’, ইসরাইলে ‘তেলআবিব লাইট রেল (পশ্চিম সেগমেন্ট)’, উজবেকিস্তানে ‘কামচিক টানেল অব অ্যাংলিয়ান-প্যাপ ইলেকট্রিফাইড রেলওয়ে’, ইথিওপিয়ায় ‘আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ে’, লাওসে ‘বোতেন-ভিয়েনতিয়েন রেলওয়ে’, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘দ্য পাম আইল্যান্ড সেকেন্ড রিক্লেমেশন প্রজেক্ট’, মরক্কোতে ‘মোহামেদ সিক্স ব্রিজ’, তানজানিয়ায় ‘নিয়েরেরে ব্রিজ’, তেহরানে ‘হাইওয়ে টানেল’, গ্যাবনে ‘ন্যাশনাল পার্লামেন্ট বিল্ডিং’ ইত্যাদি।

পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে কয়েকটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। মূল ব্রিজ, রিভার ট্রেইনিং, জাজিরা অ্যাপ্রোচ রোড, মাওয়া অ্যাপ্র্যোচ রোড, টোল প্লাজা এবং মাওয়া-জাজিরা সার্ভিস এরিয়া। মেজর ব্রিজ গ্রুপ পদ্মা ব্রিজটি বানাচ্ছে স্টিল ট্রাস গার্ডার কাঠামোতে। পুরোটাই ঢালাইকৃত। ওই গার্ডার তোলা হয় ক্রেনের সাহায্যে। সেতু তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তিয়ানি (Tianyi) নামের ক্রেন। নির্মাণ কার্যক্রমে গতি আনতে ক্রেনটি এমবিইসি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ডেভেলপ করেছে। ক্রেনটির লিফটিং ক্ষমতা ৩ হাজার ৬০০ টন!

যারাই ওই পথে পদ্মা পাড়ি দেবেন, পদ্মার দুই কূল জুড়ে দেয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখবেন! দেখবেন নদীর বুকে অসংখ্য ভাসমান ক্রেন। জার্মানি থেকে ভাসিয়ে আনা দৈত্যাকার হাইড্রোলিক হ্যামার বা হাঁতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গাঁথা হয়েছে ১২০ মিটার উঁচু একেকটি পাইল। যন্ত্রটির বিশেষত্ব হলো এটি একবারে আড়াই হাজার টন পর্যন্ত চাপ প্রয়োগ করতে পারে। বলা হয়, এটি ১০টি বোয়িং বিমানের চেয়েও বেশি ভারি! এই ভারে খুঁটিগুলো শক্ত হয়ে বসে যায় নদীর তলদেশে। এরকম ৬টি, কোথাও বা ৭টি পাইল দিয়ে তৈরি হয় বিশাল সেতুর একেকটি স্তম্ভ।

পদ্মা সেতুর টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস

 

পদ্মা নদীর বিষেশত্ব কী? খরস্রোতা পদ্মায় ব্রিজ নির্মাণ কতটা চ্যালেঞ্জের কাজ? এক্সপার্টদের ভাষ্য, পানি প্রবাহ বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরেই এর অবস্থান। হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের ওপর দিয়ে রাজশাহীতে এসে নাম নিয়েছে পদ্মা। গোয়ালন্দে এসে যমুনার সঙ্গে এবং পূর্ব দিকে চাঁদপুরে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে নদীটি। সরকারি তথ্যসূত্রগুলো বলছে, পদ্মার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,৫৭১ ফুট (৪৭৯ মিটার) এবং গড় গভীরতা ৯৬৮ফুট (২৯৫ মিটার)।

গবেষণা বলছে, মাওয়া পয়েন্টে প্রতি ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় সেই পানি রাজধানীতে ব্যবহৃত সারা দিনের পানির সমান। পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘণমিটার পানি প্রবাহিত হয়। নদীর তলদেশে মাটি সাধারণত একদমই নরম। বালির স্তরের মতোই। যা-ই প্রবেশ করানো হবে তা-ই গিলে ফেলার মতো অবস্থা। অন্যান্য দেশে নদীর তলদেশে বেডরক পাওয়া যায় অল্পসময়েই। কিন্তু পদ্মার বেডরক অনেক গভীরে। পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে পানির পৃষ্ঠের উচ্চতা ১৩ তলা বিল্ডিং-এর সমান।

 

একদিকে গঙ্গা, আরেকদিকে ব্রহ্মপুত্র। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি বিশাল ও দীর্ঘ নদীর পানি এই পদ্মা দিয়েই নামে বঙ্গোপসাগরে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পলি বহন করে এই দুই নদী। নদী দুটির পলি জমেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অনেকখানি অঞ্চল। সেতু নির্মাণস্থলে নদী প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত। উজান থেকে নেমে আসা ওই স্রোতের ধাক্কা সামলাতে হবে ব্রিজটিকে।

পদ্মায় ব্রিজ নির্মাণের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ রিভার ট্রেইনিং বা নদী শাসন। এই নদী শাসনের কাজ দেয়া হয় চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোকে। তৈরি করা হয় কনক্রিটের ব্লক। দুই পাড়ে প্রায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসানো হয় এসব ব্লক। নদী শাসনে শুধু পাথরই লেগেছে ৩৮ লাখ টন। ব্লক ১ কোটি ৩৩ লাখ। পৌনে দুই কোটি পিস জিও ব্যাগ আরও কত কি!

বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পদ্মা ব্রিজের রেল লিঙ্কের প্রকল্প পরিচালক ওয়াং কুন বলেছেন, ‘ব্রিজ নির্মাণে প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছি। এখানকার নরম মাটি শাসন বেশ কঠিন কাজ। বাংলাদেশ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান করায় এখানকার মাটিতে ব্রিজ নির্মাণের চ্যালেঞ্জটা এমনিতেই বেশি। মাটির অনেক গভীরে যেতে হয়েছে।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.