অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ কলেজে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক নিজেকে জড়িয়েছেন অনিয়ম-দূর্নীতিতে। মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষ জনাব গোলাম ওয়াদুদ তার নিয়োগের পর থেকে আজ পর্যন্ত সাবেক সভাপতির নাম ব্যবহার করে দাপটের সাথে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। কলেজের এমন কোন খাত নেই যেমন-আর্থিক, উন্নয়ন, কেনাকাটা, শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন পরীক্ষা (বহি: ও আভ্যন্তরীন) অর্থ সংশ্লিষ্ট সকল খাত যেখানে তার দূর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি ।
যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ০১ ফেব্রুয়ারী ২০১২ ইং তারিখে জনাব মোঃ গোলাম ওয়াদুদকে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগের পূর্বে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব ইসহাক হোসেনকে অবসর দেখিয়ে গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়াই উপাধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ সহ ৮ জন সিনিয়র মোষ্ট শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে অন্যান্য সকল যোগ্যতা এড়িয়ে তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হক নিয়ম বহির্ভূতভাবে তার একক সিন্ধান্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে। যেখানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ২নং ধারা (উপাধ্যক্ষ/মোষ্ট সিনিয়র-০৫ জন) এবং বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন ১৯৯৪ নীতিমালা প্রতিপালন করা হয়নি।
এছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তীতে ০৫ মে ২০১২ইং তারিখে বিবিধে নিয়োগ অনুমোদন করা হলেও দেখা যায় ০৩ অক্টোবর ২০১১ থেকে ০৫ মে ২০১২ এর মধ্যে গভর্নিং বডির কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রাক্তন অধ্যক্ষের ন্যায় যাবতীয় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ শুরু করেন। তার নিয়োগ পত্রে বেতন ভাতার উল্লেখ না থাকলেও বেতনের সরকারী অংশের অতিরিক্ত কলেজ অংশ থেকে ৫৫,৬০০/- প্রতি মাসে বেতন হিসেবে গ্রহন করেন যা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও একজন প্রভাষক হিসেবে কোন ভাবেই তিনি প্রাপ্য নন।
উল্লেখ্য, গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক মোঃ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন কালীন তার ন্যায় কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা না দিয়ে নিয়োগকালীন সময়েও তিনি তার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখেন।
গত আট বছরে তিনি কলেজের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে নিম্নোক্ত সম্পদের মালিক হয়েছেন। যার বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো।
১। অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের ১ মাসের মধ্যে তার বসবাসরত বর্তমান ফ্ল্যাট-
ফ্ল্যাট নং-১, ঠিকানা- অরণী গার্ডেন, বাসা-১৫/১৬, রোড-২০/এ, জনতা হাউজিং মিরপুর-১, ঢাকা।
ফ্ল্যাট নং-২, মিরপুর হাউজিং এস্টেট, সেকশন-৯, স্বপ্ন নগর আবাসিক এলাকা।
ফ্ল্যাট নং-৩, এ.কে উদয়ন হাউজ প্লট # ১৭ ও ১৯, রোড # ৫, ব্লক # এফ, মিরপুর-২, ঢাকা।
২। নাটোরে নিজ বাড়িতে নতুন ৩ তলা বিল্ডিং এর কাজ শেষ পর্যায়ে, যার আনুমানিক ব্যয় ৬০-৭০ লক্ষ টাকা। গাবতলী ও সাভারে জমি ক্রয় এবং নাটোরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পার্শ্বে সি.এন.জি স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি পরিকল্পনাধীন।
৩। বাংলাদেশ সঞ্চয় ব্যুরো থেকে ভেঙ্গে বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকে, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক পোষ্ট অফিসে ও অন্যান্য ব্যাংকে নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের নামে ৭০,০০,০০০/- থেকে ৮০,০০,০০০/- টাকার নগদ সঞ্চয়। পোষ্ট অফিসে নিজের ও স্ত্রীর নামে আলাদা আলাদা ভাবে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা । যেখানে শুধু স্ত্রীর নামে আছে ৪০,০০,০০০/-।
৪। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে নিজের স্ত্রীর নামে ৭-৮ লক্ষ টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন।
৫। ২০১৭ সালে কলেজের ঢাকা- মেট্রো-চ-০৩৮৪, নোয়া মাইক্রোবাসটি ৮,০০,০০০/- টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আবার নতুন প্রাইভেট কার ক্রয় করেন। ঢাকা মেট্রো-গ-২০-৩২৪৪ যার ক্রয় মূল্য ২০-২১ লক্ষ টাকা। যার পূর্বের মালিকানা নাম এখনও পরিবর্তন করা হয়নি। উল্লেখ্য কলেজের বেতন ভূক্ত ড্রাইভারগণকে নিয়মিত তার পারিবারিক গাড়ি চালানোর কাজে ব্যবহার করেন।
কলেজে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষার কেন্দ্র ফি। এই খাত থেকে সে ২০১৩-২০২০ সাল পর্যন্ত ৭০-৮০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন যা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কোন সদস্য অবহিত নয়।
এছাড়াও শিক্ষা পরিবারের অন্যান্য অনুষ্ঠানের খরচ এমপি মহোদয় বহন করার পরও এমপি মহোদয়ের নাম ব্যবহার করে অধ্যক্ষ তার আত্মসাৎকৃত টাকার ভূয়া ভাউচার দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কলেজ থেকে লুটপাট করেন।
বিভিন্ন জনকে অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিতে গিয়ে তিনি কলেজের লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করে যাচ্ছেন যা তার দায়িত্ব পালনের চরম অবহেলার শামিল।
বিএস, বিএসএস প্রোগ্রামে অবৈধ ভাবে টিউটর হিসেবে নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের রায় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অমান্য করে বেতন স্বাক্ষর।
এদিকে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ ইসহাক হোসেন বর্তমান অধ্যক্ষের অনিয়ম-দূর্নীতির সতত্যা নিশ্চিত করে বলেন,‘ যে সকল অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অনিয়ম-দূর্নীতি বেরিয়ে আসবে। যদিও তিনি বলেন, জিবি সদস্য থাকাকালীন তার অপকর্মের বিরুদ্ধে বারবার বাধা দিলেও; তিনি কাউকেউ মানেননি। উল্টো সাবেক সংসদ সদস্যকে টাকা দিয়ে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘণ করে অধ্যক্ষ হওয়ায় তার এই অনিয়ম-দূর্নীতির পেছনে সাবেক সংসদ সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকায় এবং গর্ভনিং বডির অপর সদস্যরা অধ্যক্ষের তল্পিবাহক হওয়ায় অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই এসব অনিয়ম-দূর্নীতি করে আসছেন। এ বিষয়ের সঠিক তদন্তও চান এই জিবি সদস্য।
আর এ অবস্থায় কলেজে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।