ইসলামের ডাকা হরতালে পিকেটিংয়ের জের ধরে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের বৃহত্তর আমতৈল ও ধলিপাড়া গ্রামবাসীর মধ্যে আড়াই ঘন্টাব্যাপী (সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হরতালের সমর্থনকারীরা প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের ৯০ রাউন্ড গুলি ও ৭ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। উপজেলার বিশ্বনাথ-লামাকাজী রোডের পিছের মুখ নামক স্থানে চলা সংঘর্ষে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা ও পুলিশের ৭ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য এলাকা জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথ-লামাকাজী রোডের পিছের মুখ নামক স্থানে রবিবার সকাল থেকেই আমতৈল গ্রামের গাজীর মোকাম মসজিদের ইমাম মুফতি ফারুক আহমদের নেতৃত্বে পিকেটিংয়ে নামেন ওই এলাকার জামায়াত-হেফাজত ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় পার্শ্ববর্তী ধলিপাড়া গ্রামের ড্রাইভার খায়রুল ইসলাম ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১৮-৯৮২৩) নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে তাকে বাধা দেয় হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করা ইমাম মুফতি ফারুক আহমদ গংরা। এক পর্যায়ে পিকেটাররা ড্রাইভার খায়রুল ইসলামের ওপর হামলা করে।
এসময় ধলিপাড়া গ্রামের লোকজন এসে পিকেটারদের বাধা দেন। পরবর্তীতে মুফতি ফারুক আহমদ আমতৈলের মসজিদের মাইকে ইসলাম বিরোধীরা তাদের ওপর হামলা করেছে বলে ঘোষণা দেন। মুহূর্তেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই গ্রামের প্রায় দুই হাজারেরও অধিক মানুষ। হামলা চলাকালে আমতৈল গ্রামের লোকজন ধলিপাড়া গ্রামের বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশের সদস্যরা সেখানে গেলে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করা ইমাম মুফতি ফারুক আহমদের পক্ষে থাকা আমতৈল গ্রামের লোকজন পুলিশের ওপরও হামলা করে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের প্রায় ৯০ রাউন্ড গুলি ও ৭ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশের ওপর হরতাল সমর্থনকারীদের হামলায় বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা, এসআই আফতাবুজ্জামান রিগ্যান, কনস্টেবল নাহিদ, জাবেদ, ইমরান, আব্দুল আলীম আহত হন। পুলিশ সদস্যরা ছাড়াও সংঘর্ষে দুই পক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন।
ধলিপাড়া গ্রামের আহতরা হলেন, আফাজ উদ্দিন সুবল (৪৫), খায়রুল আলম (৩০), কাচা মিয়া (৩৫), আব্দুল কদ্দুছ (৭০), আব্দুস সালাম (৬২), ইমাম উদ্দিন (৩৬), ওয়াছিদ আলী (৫২), নেছার আলী (৩১), এনামুল হক (২৮), আখলাক আহমদ (১৬), ইমন আহমদ (১৮), শিপু মিয়া (২৫), মিলাদ আহমদ (৩৫), ছানোয়ার (২০), আমিরুল ইসলাম (৩০) নজির আহমদ (৩১), জাবের মিয়া (২১), জহিরুল ইসলাম (৩৮)।
আমতৈল গ্রামের আহতরা হলেন- মুফতি ফারুক আহমদ (৪৮), গুলচর আলী (৫০), সাইদুল ইসলাম (২৫), চান মিয়া (৩৫), মোহন মিয়া (৪৫), ফয়সল আহমদ (১৪), রাসেল আহমদ (২৫), ফারুক মিয়া (৩৫), আলী আকবর (২৫), জয়নাল মিয়া (৫২)। আমতৈল গ্রামের আরো অনেকেই আহত হলেও মামলার ভয়ে নাম প্রকাশ করছেন না। তবে আহতদের মধ্যে রাসেল আহমদ, আলী আকবর, জয়নাল মিয়া ও গুলচর আলী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর আহত পুলিশ কনস্টেবল নাহিদ ও গুলিবিদ্ধ চারজনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ থানা পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ জনকে আটক করেছে। ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, ওসমানীনগরের সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম, রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, হরতালে পিকেটিং করতে গেলে এই সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে।