দলের ‘ব্যাডবয়’ খ্যাত তারকা ক্রিকেটার নাসির হোসেনের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির চাকরি এখন অনেকটাই সূচের আগায়। যে কোনো মুহূর্তে তামিমা হারাতে পারেন তার সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ক্যাবিন ক্রুর চাকরি।
তামিমাকে বিদেশ যাওয়া আটকাতে আইনি নোটিশ দেওয়া পর সংশ্লিষ্টদের বিশ্লেষণে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
কেননা আন্তর্জাতিক এভিয়েশন অঙ্গনে সুনামের সঙ্গে যাত্রীসেবা দিয়ে যাওয়া সৌদিয়া এয়ারলাইন্সটি ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে এমন কর্মীকে রাখতে কখনোই আগ্রহী নয়। কর্মীদের সব রেকর্ড যাচাই বাছাই করেই সেবা অব্যহত রেখেছে এয়ারলাইন্সটি।
সেই মর্মে তামিমা এখন ফৌজদারি মামলার প্রধান আসামি। এমন আসামিকে স্বাভাবিকভাবেই চাকরিতে রাখতে চাইবে না সৌদিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়েই ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেছেন মর্মে তামিমাকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে তদন্তাধীন।
এদিকে তামিমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেছেন তার সাবেক স্বামী মো. রাকিব হাসান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে মিথ্যাচার, বিষোদগার ছড়ানোর অভিযোগ এনে রাকিব রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলার আবেদন করেন।
উত্তরা-পশ্চিম থানার ওসি আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস যুগান্তরকে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এসম মামলার নথিপত্র ইতোমধ্যে সৌদি এয়ারলাইনসকে সরবরাহ করে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন রাকিবের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
তামিমার বিরুদ্ধে আদালতে করা মামলার বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত চাকরির সুবাদে যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে সেই নোটিশে।
সূত্র জানিয়েছে, তামিমার আমলনামা এখন সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের হেড অফিস সৌদি আরবে পৌঁছেছে। সেখানকার হেড অব রিক্রুটমেন্ট বরাবর গত ১০ মার্চ ইস্যু করা চিঠিটি হাতে পেয়েছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। চিঠির সঙ্গে প্রয়োজনীয় ৩ টি ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে তামিমা সুলতানার পাসপোর্ট, ক্রিমিনাল রেকর্ড এবং এ সংক্রান্তে নিউজ কাটিং সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে হোটেল সোঁনারগাওয়ে অবস্থিত সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার বরাবরও একই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাকিব হাসানের আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের ইস্যু করা চিঠিতে লেখা হয়েছে, আমার ক্লায়েন্ট (রাকিব হাসান) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন সৌদি এয়ারলাইন্স নৈতিক স্খলনজনিত ও অপরাধে জড়িত কাউকে তার কর্মী হিসেবে কোনো প্রকার সুবিধা প্রদান এবং বাংলাদেশ ত্যাগ করা সুযোগ তৈরি করে দেবে না। আশা করি সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে তামিমা সুলতানা যেন কোনো মতেই বাংলাদেশ ত্যাগ করতে না পারেন।
পাশাপাশি সৌদিয়া এয়ারলাইন্স চাইলে তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে অন্য কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এরইমধ্যে যুগান্তরের হাতে আসা ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বরের সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের বিশেষ ডকুমেন্ট ‘দ্যা ক্রিমিনাল রেকর্ড’ বলছে অফিসিয়ালি তামিমার স্বামীর নাম রাকিব হাসান। ডকুমেন্ট তার নাম লেখা রয়েছে ‘TAMIMA SULTANA RAKIB HASAN’। এই ডকুমেন্টে তামিমার দুই হাতের ১০ আঙুলের ছাপও রয়েছে।
এদিকে ঢাকায় সোমবার তামিমা সুলতানাকে সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। সেখানে তামিমা দাবি করেছেন, উত্তরার কাজী অফিস থেকে রাকিবকে তালাক দেওয়ার পরই নাসিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। তামিমার দাবির ভিত্তিতে সেই কাজী অফিসের নথি বইসহ সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট জব্দ করে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখছে পিবিআই।
এ ক্ষেত্রে ল্যাব ও অন্যান্য প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছেন তারা। সম্পৃক্ততা থাকায় উত্তরার কাজী খলিলুর রহমান এবং তার সহযোগী জসিম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই।
চলতি বছরের ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকা তামিমাকে জমকালো আয়োজনে বিয়ে করেন ক্রিকেটার নাসির হোসেন। বিয়ের আলোচনা থামার আগেই তামিমার আগের স্বামী রাকিব হাসান থানায় জিডি করেন।
জিডিতে রাকিবের অভিযোগ, তামিমার সঙ্গে ১১ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন তিনি। তাদের ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। অথচ তাকে ডিভোর্স না দেওয়ার পরও নাসির জেনেশুনে তামিমাকে বিয়ে করেন। রাকিবকে আগের স্বামী বলে স্বীকার করলেও তালাকের পরই নাসিরের ঘরণি হয়েছেন বলে বরাবর দাবি করে আসছেন তামিমা। একই দাবি নাসিরেরও। রোববার মিরপুর গ্রাউন্ডে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে নাসির বলেছেন যে, তামিম ও তিনি এতো গাধা নন যে ডিভোর্স না দিয়েই বিয়ে করে ফেলবেন।