বিখ্যাত আলেম ও তাফসিরবিশারদ আল্লামা মুহাম্মদ আলী সাবুনি ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৯১ বছর। শুক্রবার (১৯ মার্চ) জুমার চার ঘণ্টা আগে তুরস্কের ইয়ালোভা শহরে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বের ইসলামী ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গভীর শোক প্রকাশ করেন। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টির প্রধান ড. ইউসুফ কারাজাভি বলেন, ‘মহান আল্লাহ আমাদের সম্মানিত ভাই শায়খ মুহাম্মদ আলী সাবুনির প্রতি অনুগ্রহ করুন। বর্তমান যুগে তাফসির বিষয়ে একজন পথিকৃৎ আলেম।’ সিরিয়ার প্রখ্যাত আলেম ড. মুহাম্মাদ রাতিব আন নাবুলসি বলেন, ‘শায়খ মুহাম্মদ আলী সাবুনির মৃত্যু সিরিয়া ও মুসলিমবিশ্বের জন্য অনেক বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। পুরো বিশ্বের অসংখ্য আলেম ও শিক্ষার্থী তাঁর থেকে সরাসারি বা তাঁর রচনা সমগ্র থেকে উপকৃত হয়েছেন।’
এ ছাড়া আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ ঈসা আল মাসারাবি, সৌদি আরবের ড. আবদুল কারিম বাক্কার, কাতারের বিশিষ্ট সাংবাদিক জাবের আল হারমি, ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি, পাকিস্তানের আল্লামা তাকি উসমানি, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার পরিচালক মাওলানা রাবে হাসান নদভিসহ বিশ্বের ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদরা এ মহান আলেমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (২০ মার্চ) ইস্তাম্বুলের সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়। ড. মুহাম্মদ আলী সাবুনি আধুনিক যুগে মুসলিম বিশ্বের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। জ্ঞান ও গুণের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। ইসলামী আইন ও তাফসির বিষয়ক তাঁর রচনাবলি ইসলামী জ্ঞানচর্চায় ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাঁর রচিত তাফসির বিষয়ক গ্রন্থ ‘সাফওয়াতুত তাফসির’ বিশ্বের সব দেশে বহুল প্রচলিত একটি গ্রন্থ। তাঁর গ্রন্থগুলো বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
মুহাম্মদ আলী সাবুনি ছিলেন ‘সিরিয়ান স্কলারস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি। সিরিয়াবাসীর দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সাধারণ জনগণের সহায়তায় নানা সময় বাড়িয়েছেন তিনি। তিনি নিজ জন্মভূমি সিরিয়া, অতঃপর সৌদি আরবে দীর্ঘকাল কাটিয়ে অবশেষে তুরস্কে থিতু হয়েছিলেন।
মুহাম্মদ আলী সাবুনি ১৯৩০ সালে সিরিয়ার হালব শহরে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ পিতা হালবের প্রখ্যাত আলেম শায়খ জামিল সাবুনির কাছে প্রাথমিক পাঠ সম্পন্ন করেন। সিরিয়া সরকারের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আজহারে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মিসর পাড়ি জমান। ১৯৫২ সালে শরিয়া বিষয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৫৪ সালে শরয়ি বিচার বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬২ সালে মিসরে উচ্চশিক্ষা শেষ করে হালবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইসলামী সংস্কৃতি বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। অতঃপর সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়) শরিয়া বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। এখানে দীর্ঘ ২৮ বছর তিনি অধ্যাপনা করেন। এ সময় উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ অ্যান্ড ইসলামিক হেরিটেজ রিভাইভালের গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ বিষয়ক অলৌকিকত্ব নিয়ে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৭ সালে বর্ষসেরা শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমিরাতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কোরআন অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। তাফসির বিষয়ক রচনাসমগ্র উপহার দিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের সেবা করায় তাঁকে এ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মুহাম্মদ আলী সাবুনি রচিত পবিত্র কোরআনের তাফসির বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো ‘মুখতাসারু তাফসিরু ইবনে কাসির, মুখতাসারু তাফসিরু আত তাবারি, আত তিবয়ান ফি উলুমিল কুরআন, রাওয়াইউল বয়ান ফি তাফসিরি আয়াতিল আহকাম, কাবাসুন মিন নুরিল কোরআন ও সাফওয়াতুত তাফাসির।