শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং আহত হয় আরো অনেকে। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানও। এতে ১৫ ভারতীয় নাগরিকের প্রাণহানি ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।

পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ফলে দুই দেশের উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে নয়াদিল্লি। হামলার বদলা নিতে হুমকি-ধমকির একপর্যায়ে বুধবার রাতে দেশটিতে আক্রমণ চালায় ভারত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সাম্প্রতিক উত্তেজনা ক্রমেই যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। ফলে শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ-এশিয়া পড়তে যাচ্ছে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে।

বুধবার রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ২০১৯ সালের তুলনায় বড় পরিসরের উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেন, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাত আরো তীব্র হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এতে ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিক নিহত হয়। এ সময় আহত হয় বেশ কয়েকজন পর্যটক। মূলত এ হামলার পর থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। হামলার সঙ্গে পাকিস্তান সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করে মোদি সরকার।

তবে শেহবাজ শরীফের সরকার তা অস্বীকার করে।অনেকে বলছেন, ২০০৮ সালে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার মুম্বাইয়ে হামলার পর বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এটিই ছিল সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা। মুম্বাইয়ে ওই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন।

কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা উস্কে দেওয়ার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে ভারত। আজ বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পেহেলগাম হামলায় অংশ নেওয়া বন্দুকধারীদের সঙ্গে পাকিস্তানের যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে নয়াদিল্লি। লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলার পেছনে কাজ করেছে। যদিও রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিদ্রোহীরা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র সংগ্রামে রয়েছে। তারা স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়া দাবিতে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্রোহীদের দমাতে অঞ্চলটিতে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি রয়েছে ভারতের।

নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার ২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মীরের ‘আধা-স্বায়ত্তশাসিত’ মর্যাদা বাতিল করে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়ন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অঞ্চলটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত মাসেই ঘটে ভয়াবহ হামলার ঘটনা।

ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের ৯টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে কোনো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মতে, ছয়টি স্থানে ২৪টি হামলা চালিয়েছে ভারত। এগুলো হলো- পাকিস্তান ভূখণ্ডের পূর্ব আহমেদপুর, মুরিদকে ও শিয়ালকোট এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কোটলি, বাগ ও মুজাফ্ফরাবাদ।

পাকিস্তানের নেতারা এই হামলাকে ‘যুদ্ধের উস্কানি’ বলে নিন্দা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার দেশের ‘সমুচিত জবাব দেওয়ার’ অধিকার রয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েলও রয়েছে।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা যায়, একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া উঠছে। কর্মকর্তারা দাবি করেন, এটি বিধ্বস্ত বিমানগুলোর একটি। তবে বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ভারত সরকারের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানা যায়নি।

কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। ওই সময় ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতীয় উপমহাদেশ হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। উপমহাদেশের প্রায় ৮৫ হাজার ৮০০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই পার্বত্য অঞ্চলটি নিয়ে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বিভিন্ন চুক্তির ফলে বর্তমান শাসন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে প্রতিটি দেশ কাশ্মীর বা এর কিছু অংশের মালিকানার দাবিতে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে।

বিভাজনের আগে এই অঞ্চলটি জম্মু ও কাশ্মীর নামে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য ছিল। পরে স্বাধীনতার জন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা সত্ত্বেও, রাজ্যের হিন্দু নেতা ভারতে যোগ দিতে রাজি হন। যদিও অধিকাংশ বাসিন্দা এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিলে। একপর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। পরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ‘যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর হয় এবং রাজ্যটিকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম অংশ এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত বৃহত্তর অংশে বিভক্ত করা হয়। উভয়ের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সীমান্তকে নিয়ন্ত্রণ রেখা বলা হয়। আর ১৯৬২ সালে ভারতের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর থেকে কাশ্মীরের পূর্ব অংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। ফলে কাশ্মীর নিয়ে তাদের বিরোধ যখনই তীব্র হয়, তখন এটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, পাকিস্তান ও ভারতের প্রত্যেকের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।

থিঙ্ক ট্যাঙ্কটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের তুলনায় প্রতিরক্ষা খাতে নয় গুণ বেশি ব্যয় করেছে ভারত। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে, ভারত তার প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে পাকিস্তান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি বরাদ্দ দিয়েছে।

সেনাসংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ভারত। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে, ভারতের মোট সক্রিয় সৈন্য সাড়ে ১৪ লাখের কিছু বেশি, অন্যদিকে পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের কিছু বেশি। রিজার্ভ সেনা বা প্যারামিলিটারি বাহিনীর ক্ষেত্রেও এগিয়ে ভারত।

স্থলভাগের শক্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর বা রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি সংখ্যা ৬৬২, ভারতের ১০০। পাকিস্তানের মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ৬০০, ভারতের ২৬৪।

অন্য বেশ কিছু দিকে সংখ্যায় এগিয়ে ভারত। ভারতের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজার ২০১টি, সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি, টোওড আর্টিলারি বা টেনে নেওয়ার কামান ৩ হাজার ৯৭৫টি। পাকিস্তানের ট্যাংক রয়েছে ২ হাজার ৬২৭ টি, সাঁজোয়া যান ১৭ হাজার ৫১৬টি, টোওড আর্টিলারি ২ হাজার ৬২৯টি। দুই দেশের কেউই জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কূটনীতি ও সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান। দুই দেশের নেতারা এখনই সংযত না হলে চড়া মূল্য দিতে হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানির শঙ্কা থাকছেই।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews2012@gmail.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.