উদ্বিগ্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ-গ্যাস ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব নয়। অর্থনীতির স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।
‘প্রাইভেট সেক্টর আউটলুক : প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানো সত্ত্বেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। মূলত সরবরাহ ব্যবস্থার খরচ বাড়া এজন্য দায়ী। তাই নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থাটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সুদহার বাড়ার কারণে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে নীতি সুদহার কমিয়ে ঋণের সুদহার কমানোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া জ্বালানির সরবরাহ ও দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির বলেন, গত ৩ মাসে উলেখযোগ্য পরিবর্তন হলেও দেশ কঠিন সময় পার করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। শিল্প অঞ্চলে আগের মতোই শিথিল আছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবসায়ীদের একটি টাইমলাইন দিতে হবে যে, এই সময়ের পর আর আইনশৃঙ্খলা ও জ্বালানি সমস্যা থাকবে না। এখনো শ্রমিকরা হাজিরা দিয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন, ব্যবস্থাপকদের মারধর করছেন।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, গত ৩ মাসে দেশ এগিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারলে ব্যবসা আরও এগিয়ে যাবে। ব্যাংকের এলসি সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়াতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলতে বেশি সময় লাগবে না। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ীদের আটক করে, জেলে ভরেও মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, যারা ব্যাংক লুটপাট করেছে, তাদের কেন সাজা হয়নি। তাদের ভর্তুকি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে। শিল্প করে আমরা বিপদে আছি। ব্যাংক লুটপাটে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। এখন যারা নীতিনির্ধারক তাদের কাছে গেলে মনে হয়, অন্যায় আবদার নিয়ে চোর-বদমাইশ আসছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা খরচ বাংলাদেশে। জমি কেনার পর ৩ জন মালিক হাজির হন। মাটিতে কোপ দেওয়ার আগে স্থানীয় মাস্তানদের চাঁদা দিতে হয়। নিজেরা গ্যাস তুলতে পারলে খরচ কমত। কিন্তু গ্যাস আমদানির মাধ্যমে সক্ষমতা কমানো হচ্ছে।
নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আইনশৃঙ্খলাকে জিরো টলারেন্সে আনতে হবে, অর্থনীতির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। একদিন আগে মাহমুদ ডেনিমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে বেদম মারধর করা হয়েছে। এই অবস্থা হয়েছে কারণ শ্রমিকরা জানে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এ কারণে শ্রমিকরা ১৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, স্মার্টফোন নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করাসহ উদ্ভট সব দাবি করছে। দেশের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার বিকল্প নেই।
ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রেমো রউফ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কমপ্লায়েন্টভাবে ব্যবসা করাই বড় অভিশাপ। যারা কমপ্লায়েন্ট ভাবে ব্যবসা করছে দিনে দিনে তাদের দায় বাড়ছে। এজন্য দায়ী সরকারের ভুল নীতি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেন, শ্রম অসন্তোষের কয়েকটি ঘটনায় মালিকরা সরে আসছেন, তখন একটা স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতকেও যুক্ত হতে হবে। যারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, তারা শ্রমিকদের টার্গেট করছেন।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য সংগঠনগুলো যৌক্তিকীকরণ করা দরকার। একটি খাতে একাধিক সংগঠন থাকা উচিত নয়। তাহলে ভালো নেতৃত্ব আসবে। এমনকি সরকারের এত মন্ত্রণালয় থাকার প্রয়োজন নেই। এগুলো মার্জ করে কমিয়ে ফেলা উচিত। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বশিরউদ্দিন বলেন, ব্যবসার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে।