শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ অপরাহ্ন

ইফতারের আগেই সন্তানসহ চিরনিদ্রায় দম্পতি, সাহরি খেয়ে ঘুম

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪
রোজা রাখার জন্য শেষ রাতে সাহরি খেয়ে ভোরে ঘুমাতে গিয়েছিলেন আগা করিম উদ্দিন (৩১) ও তার স্ত্রী মোছা. শাম্মী আক্তার রুজি (২৫)। সঙ্গে দেড় বছরের শিশু সন্তান নাফজি তামিম। তাদের সেই নিদ্রা যে চিরনিদ্রায় রূপ নেবে সেটা হয়তো ঘুণাক্ষরে ভাবেনি কেউ। বাড়ির অনতিদূরের টিলা ধসে মাটি চাপায় তাদের এ আকস্মিক মৃত্যু তাই মেনে নিতে পারছেন না পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
নিহত আগা করিমের মা ইয়াছমিন বেগম (৫৫) সন্তান হারিয়ে অনেকটা পাথর। কান্না, বিলাপ বা আহাজারি না করে তিনি কাঠের পুতুলের মতো বসে আছেন। ছেলে, পুত্রবধূ আর নাতিকে হারানোর শোকে তিনি যেন পাথর। ঘুর লাগা গলায় বললেন, ‘আমার ফুয়ায় (ছেলে) রোজা রাখছিল।
সাহরি খাইয়া ঘুমাইল। ইফতার আর করতে পারছে না আমার ফুতে। এর আগেই আল্লাহ’য় লইয়া গেলাগি।’ কথা বলতে বলতে তার চোখের কোন জলে ভাসতে শুরু করে।
সোমবার (১০ জুন) ভোর ৬টার দিকে সিলেট নগরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেজরটিলার চামেলীবাগ এলাকায় টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। নিহত করিম চামেলীবাগের ২ নম্বর সড়কের ৮৯ নম্বর বাসার বাসিন্দা মৃত আগা রফিক উদ্দিনের ছেলে।

জানা গেছে, চামেলীবাগের বাড়িটিতে আগা করিম উদ্দিনের পরিবার, তার ভাইয়ের পরিবার, তাদের মা ও চাচাতো ভাই মিলে ১১ জন বসবাস করেন। তাদের বাসা থেকে টিলার দূরত্ব ছিল হাজার ফুটের মতো। ভোরের দিকে ভারী বর্ষণ শুরুর পর এক পর্যায়ে হঠাৎ টিলা ধসে এসে তাদের বাড়িকে মাটিচাপা দেয়।

এতে তাদের আধা পাকা বাড়ি পুরোপুরি ধসে যায়। টিলা ধসের শব্দ পেয়ে পরিবারের কয়েকজন বেরিয়ে যেতে পারলেও করিম উদ্দিন ও তার ভাই রহিম উদ্দিনের পরিবার আটকা পড়ে। ঘটনার পর স্থানীয়দের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিম উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তাদের প্রচেষ্টায় রহিম উদ্দিন, তার স্ত্রী ও সন্তানকে আহত অবস্থায় ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে করিমের পরিবার বেশি চাপা পড়ায় তাদের উদ্ধারে বেগ পেতে হয়। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পরে দুপুর একটার দিকে তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।কালের কণ্ঠের কাছে ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনার দেন পাশের বাড়ির বাসিন্দা ও নিহতের সম্পর্কে মামা জুনেদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘ভোরে বিকট শব্দে প্রথমে বজ্রপাত হয়। এর পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মাথায় বিমানে যেরকম শো করে শব্দ হয় অনেকটা সেরকম শব্দ ও বাতাস টের পাই। এর পরপরই আর্তচিৎকার শুনে আমি এবং আমাদের পরিবারের লোকজন দৌড়ে বের হই এবং গিয়ে দেখি টিলা ধসে করিমদের ঘর ভেঙেচুরে এক পাশে সরে এসেছে।’

নিহত করিমের মা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘রোজা রাখার জন্য সাহরি খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। যে কারণে ঘুম গভীর ছিল। টিলা ধসের শব্দ পেয়ে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে তোলা গেলেও তাদের ঘুম ভাঙেনি। সেই ঘুমই তাদের চিরনিদ্রা হয়ে গেছে।’

নিহতের আত্মীয় ও চাচা মো. খায়রুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাসার সবাই ঘুমেই ছিল। কয়েকজন সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বেরুতে পেরেছে। দুই ভাতিজা ও তাদের পরিবার মিলিয়ে ছয় জন আটকা পড়ে যায়।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিলা ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্থানীরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। পরে সেনাবাহিনীও উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।’ ভারী বর্ষণ থেকে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিলা ধসের ঘটনায় ৬ জন চাপা পড়েন। এর মধ্যে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও বাকি তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.