শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন

স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা হয়েছিল শাহজাহানের আগুন লাগার আগে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৫ জুন, ২০২২

সীতাকুণ্ডে সোনাইছড়ী ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় সাড়ে ৪ শতাধিক আহত হয়েছেন।

স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ১১টায় উপজেলার সোনাইছড়ী ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আমদানিকৃত একটি কন্টেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। শনিবার রাত্রের দুর্ঘটনায় ৪ শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন।

সূত্রে জানা যায়, কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর পর কনটেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনার ডিপোর আশপাশের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক কম্পনের সৃষ্টি হয়। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক বিভিন্ন বাড়ি-ঘর ও মসজিদের দরজা এ জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এ ঘটনায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়।

চারপাশে কান ফাটানো আওয়াজ। বিকট শব্দে ক্ষণে ক্ষণে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। এর পরই দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা।

এর পর হঠাৎই আরও জোরালো একটি বিস্ফোরণ হলো।  তার তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, আশপাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। যেন ভূমিকম্প হয়েছে।

আগুনের পর ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভিড় করেছেন তাদের স্বজনেরা; তাদের আহাজারি আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

উদ্ধার তৎপরতা শুরুর পর রাত ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে আনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে রোগীর চাপ বেড়ে গেলে এন্ট্রি করার চেষ্টা বাদ দেওয়া হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেইটে কোনো অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ালেই সেটির কাছে ছুটে যাচ্ছেন স্বজনরা। আবার সংবাদকর্মী বা পুলিশ সদস্যদের সামনে গিয়ে হাতের মোবাইল থাকা ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন স্বজনের খোঁজ।

শনিবার রাতে পণ্য নিয়ে ডিপোতে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম শহরের মনসুরাবাদ এলাকার ট্রাক চালক শাহজাহান। আগুন লাগার আগে মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল।

নিখোঁজ বড় ভাই শাহজাহানের খোঁজে বাবা তাজুল ইসলামকে সঙ্গে এসেছেন কলেজছাত্রী সূচনা (২০)। তিনি বলেন, আমরা রাতে এই ঘটনা জানতাম না, সকালে জানতে পেরেছি। সকাল থেকেই ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাই। ডিপোতে ট্রাক আছে, ভাই নেই।

রোববার ভোর থেকে সূচনাদের মত অনেকেই নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় করতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ড আর বারান্দায় সেই ভিড়ও বাড়তে থাকে। অনেকে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও খোঁজাখুঁজি করেন।

বিএম কনটেইনার ডিপোতে সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া মমিনুলের পা উড়ে যায় ওই বিস্ফোরণে।  সেই ক্ষতের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করে পকেট থেকে কোনো রকমে মোবাইল ফোন বের করেন মমিনুল।

বাবাকে তিনি বলেছিলেন, বাবা কিছুক্ষণ পর পর এখানে বিস্ফোরণ হচ্ছে। আমার পা উড়ে গেছে।  তার পরই ফোনটা কেটে যায়। ফোনে হঠাৎ ছেলের আর্তনাদ শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদুল হক।

এর পরও ছেলের কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায় ফোন কানে ধরে রাখেন অনেকক্ষণ।  কিন্তু না, লাইন কেটে যাওয়ার পর আর ছেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়নি ছেলে ফরিদুলের।

এর কিছুক্ষণ পরেই টিভিতে দেখতে পান ছেলে মমিনুল যেখানে আছেন, সেখানকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি।

শঙ্কায় পড়েন—  পা উড়ে যাওয়া ছেলের জীবনটা আছে তো? তখনো ফরিদুল জানতেন না, পা হারানোর পর প্রাণটাও হারিয়েছেন মুমিনুল।

গণমাধ্যমকে ফরিদুল হক বলেন, ফোনেই ছেলের আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। ও চিৎকার করে বলছিল— ‘বাবা এখানে কিছুক্ষণ পর পর ব্লাস্ট হচ্ছে।’ তার পর আরও একবার ফোন করে ছেলে। তখন জানায়, ওর পা উড়ে গেছে বিস্ফোরণে।

মমিনুলের কাকা খোরশেদ আলম বলেন, ‘এ খবর শুনেই আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে যাই।  গিয়ে ভাতিজার মরদেহ দেখতে পেলাম। ’

মমিনুলের খালাতো ভাই তায়েব জানিয়েছেন, ‘চাকরি করে স্নাতকোত্তর করবেন বলে আশা ছিল মমিনুলের। কিন্তু তার জীবনটাই চলে গেল। মমিনুল শনিবার রাত ৮টায় ডিপোতে যায়।

এইচ বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এ আপনাকে স্বাগতম। “সময়ের প্রয়োজনে- HBD NEWS24” নিয়ে আমরা আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে ঘটে যাওয়া নানা সংগতি, অসংগতি আর তথ্য নিয়ে আপনিও যোগ দিন HBD NEWS 24 এ আমাদের কাছে মেইল করুন: hbdnews24@yahoo.com

More News Of This Category

© All rights reserved © 2012 HBDNEWS24

POWERED BY MH GROUP OF COMPANY.