সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে রাশিয়াকে নাস্তানাবুদ করতে যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তা সফল করতে প্রয়োজন চীন ও ভারতের অংশগ্রহণ। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয়। তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ না করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার মাধ্যমে বেইজিং নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পর সবার দৃষ্টি তাই নয়াদিল্লীর দিকে।
এদিকে, এরইমধ্যে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। বৈঠকের পরেই শ্রিংলা বলেন, ‘পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর সঙ্গে জাতিসংঘের আলোচনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত একাজে সব রকম সহযোগিতায় প্রস্তুত।’
এছাড়া, জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি টুইট করে পররাষ্ট্রসচিবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে ভারতীয় মিশন বুঝতে পারছে, রাশিয়াকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লির উপর তৈরি হওয়া চাপের বহর কত বড় হতে পারে।
এর আগে দুইবার জাতিসংঘে রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছে। দুইবারই ভারত ভোটদানে বিরত থেকেছে। বিরত থাকায় ব্যাখ্যা হিসাবে নয়াদিল্লি যা বলেছে তাতে সন্ত্রাসের, হিংসার বিরুদ্ধে নিন্দা থাকলেও মস্কো বা ভ্লাদিমির পুতিন প্রশাসনের নাম করে কোনও নিন্দা বা সমালোচনা ছিল না।
বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি আমেরিকা এবং পশ্চিম বিশ্ব। তারই মধ্যে, যুদ্ধ চলাকালীনই রাশিয়া থেকে কম দামে অশোধিত তেল কিনেছে ভারত। বিষয়টি ‘ইতিহাসে থেকে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটন। শুধু তাই-ই নয়, গত কালই কোনও রাখঢাক না করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতকে নিয়ে গঠিত কৌশলগত সামরিক জোট কোয়াডে চিড় ধরেছে। এদের মধ্যে জাপান, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া সম্মিলিতভাবে রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নিলেও ভারত ‘কোনও কারণে নড়বড়ে।’
এদিকে, আগামী মাসেই আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। চীন প্রশ্নে কোয়াডের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা প্রবল। ফলে এক দিকে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল নির্ভরতা, অন্য দিকে আমেরিকা তথা কোয়াডের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে নির্ভরতা—এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে এবারের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে একটি পক্ষ অবলম্বন করতে হবে ভারতকে। এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।