ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বহরের জন্য নির্ধারিত ফেরিতে ওঠায় ব্যক্তিগত গাড়ির দুই যাত্রীকে বেদম পেটানো হয়েছে। মেয়র তাপসের প্রটোকলে থাকা ব্যক্তিরা মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই দুই ভুক্তভোগী।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার দুজন বরিশাল থেকে নিজেদের গাড়িতে ঢাকায় ফিরছিলেন। আর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে মেয়র তাপসের গাড়িবহর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিল।
মারধরে আহত দুজন হলেন ঢাকার সুপার এক্সপার্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান নূহ আলম রাজীব (৩৮) এবং একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাশেদ ভূঁইয়া (৩৫)। তাঁদের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ওয়াকিটকি ও হাত দিয়ে মারা হয়েছে। ওয়াকিটকির আঘাতে দুজনের মাথা থেকে রক্তও বের হয়। ফেরিঘাটের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে মাদারীপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে রাতেই ঢাকায় ফেরেন তাঁরা। রক্ত পড়া বন্ধ করতে তাঁদের মাথায় ও শরীরের কয়েকটি স্থানে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
নূহ আলম রাজীব আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটের পুলিশ বলায় আমরা ফেরিতে উঠি। ওঠার পরই মেয়রের প্রটোকলে থাকা ওয়্যারলেস ও পিস্তলধারী কয়েকজন আমাদের ফেরি থেকে নেমে যেতে বলে। আমরা তাদের অনুরোধ জানালে তারা চড়াও হয়ে আমাদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। ঘাটে পুলিশ আর স্থানীয়রা না থাকলে আমাদের মেরেই ফেলত।’ আইনের দ্বারস্থ হবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতে ঝামেলা আর ভোগান্তি তো আরও বাড়বে।’
রাশেদ ভূঁইয়া বলেন, কোনো কথাবার্তা ছাড়াই বহরে থাকা ৮ থেকে ১০ জন লোক ওয়্যারলেস দিয়ে তাঁদের মারধর করেন।
বাংলাবাজার ঘাটের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ঝোড়ো বাতাস আর বৃষ্টির কারণে শনিবার বিকেলে এক ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। আগে থেকেই দুটি প্রাইভেট কার নিয়ে ১ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কে পারাপারের অপেক্ষায় ছিলেন নূহ আলম রাজীব। সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেয়র শেখ তাপসের বহর বাংলাবাজার ঘাটে আসে। তাঁর বহরের দুটি যাত্রীবাহী বাসসহ ৩৫টি গাড়ি ছিল। বহরে গাড়ি পারাপারের জন্য দুটি ফেরি আগে থেকেই ঘাটে দাঁড়িয়ে ছিল। বহরের সঙ্গে একই ফেরিতে ওঠে রাজীবের সঙ্গে থাকা দুটি গাড়ি। ফেরিতে ওঠার পর বহরে থাকা কয়েকজন রাজীবকে গাড়ি নামিয়ে নিতে বলেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বহরে মেয়রের প্রটোকলে থাকা সদস্যরা হাতের ওয়্যারলেস দিয়ে বেদম মারধর করেন রাজীবকে। রাশেদ এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করে ফেরি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ইসলামিয়া হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, মারধরে দুজনের মাথায় ও চোখে জখম হয়েছে।
অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেয়রের বহরে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, ফেরিটি সিটি করপোরেশনের বহরে থাকা গাড়ির জন্য বরাদ্দ ছিল। সেখানে ওই দুজনের ওঠার কথা নয়। তিনি বলেন, বাইরের দুটি গাড়ি ফেরিতে ওঠায় বহরের দুটি গাড়ি উঠতে পারছিল না। ওই দুটি গাড়িতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নামার জন্য বলা হয়েছিল। ভদ্রভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কখনো নিজেদের যুবলীগ নেতা, গোপালগঞ্জে বাড়ি—এমন কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে ফেরির লোকজনই বিরক্ত হয়ে মারধর করেছেন। বহরের কেউ মারেননি।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, মেয়রের বহরে থাকা গাড়িগুলো ফেরিতে ওঠার পর দুই যাত্রীকে মারধরের কথা তিনি শুনেছেন। তবে ওই দুজন পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। এ কারণে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি।
মেয়র তাপসের সঙ্গে মুঠোফোনে আজ বিকেলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।